“জরুরী দরকার আছে” বলে ডেকে নিয়ে বাবাকে খুন, ছেলেকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ
আমার কথা, উখড়া, ৯ ফেব্রুয়ারী:
খনি কর্মী বাবাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলেকে নিয়ে এসে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মান করালো পুলিশ। কিভাবে বাবাকে খুন করেছে পুলিশের সামনে অভিনয় করে দেখালো ছেলে। পুনর্নির্মাণ পর্বটি পুরোটা ভিডিওগ্রাফি করা হয়।
২৩ শে জানুয়ারি বাকোলা সুভাষ কলোনি সংলগ্ন জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় এতোয়ারী মিঁঞা (৫৯) নামে চনচনি কোলিয়ারির এক শ্রমিকের মৃতদেহ। মৃতদেহটির মুখে ছিল আঘাতের চিহ্ন, গলায় গামছার ফাঁস, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেহটি বাধা ছিল গাছের সাথে। মৃত খনি কর্মীর স্ত্রী মারিয়া বিবি সেদিন জানান ২১-শে জানুয়ারি বিকেলের পর স্বামী আর বাড়ি ফেরেনি। ২৩ শে জানুয়ারি ছেলে আব্দুল হাকিমকে সাথে নিয়ে মারিয়া বিবি উখড়া পুলিশ ফাঁড়িতে স্বামীর নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তার ঘন্টা তিনেক পরই জঙ্গল থেকে এতোয়ারী মিঁঞার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। যে অবস্থায় দেহটি উদ্ধার হয়েছিল তা দেখে তদন্তকারীদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। ময়না তদন্তের রিপোর্টে জানা যায় শ্বাসরোধের কারনে মৃত্যু হয়েছিল ওই ব্যক্তির। এরপর ২৭ শে জানুয়ারি মারিয়া বিবি স্বামীকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ফাঁড়িতে। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। জেরা করা হয় মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের। সুত্র মারফত জানা যায় ২১-শে জানুয়ারি এতোয়ারী যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সেই সময়ে তার বাড়ির সংলগ্ন এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়েছিল। ফুটেজের থেকে পাওয়া তথ্যের সাথে নিহতের ছেলে হাকিমের বক্তব্যের অসংগতি থাকায় সন্দেহ বাড়ে তদন্তকারীদের। ৬ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারীদের টানা জেরাতে একসময় ভেঙ্গে পড়ে ছেলে হাকিম। স্বীকার করে সেই বাবাকে খুন করেছে বলে। এরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
আদালতের নির্দেশে বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে অভিযুক্ত হাকিম। আজ শনিবার অভিযুক্ত ছেলেকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে পুলিশ। করা হয় ঘটনার পুনর্নির্মাণ। তদন্তকারী অফিসার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অন্ডাল থানার ওসি তন্ময় রায়, উখরা ফাঁড়ির আইসি মইনুল হক। চনচনী কোলিয়ারির পেছন দিকে যেখানে মৃত এতোয়ারী মিঁঞার পরিবার থাকে সেখান থেকে শুরু হয় ঘটনার পুনর্নির্মাণ। একটি জায়গা দেখিয়ে অভিযুক্ত বলেন সেদিন সন্ধ্যেবেলায় বাবা এতোয়ারী মিঁঞা এখানে বসেছিলেন। বাজারে দরকার আছে বলে সেখান থেকে এতোয়ারী মিঁণহাকে টোটোতে চাপায় সে। চনচনি থেকে বাকোলা আসার রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা আসার পর প্রধান রাস্তা ছেড়ে ডান দিকে জঙ্গলের ভিতরে বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে টোটো দাঁড় করায়। টোটো থেকে এতোয়ারী মিঁঞাকে নামিয়ে আচমকাই তার গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে টান মারে সে। এতে এতোয়ারী মিঁঞা মাটিতে পড়ে যান। এই অবস্থায় গামছা ধরে দেহটি বেশ কিছুটা টেনে নিয়ে গিয়ে একটি গাছের সাথে বেঁধে সে টোটো নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় বলে জানায় হাকিম। ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য একটি বড় কুশপুতুল সাথে নিয়ে এসেছিল পুলিশ। অভিযুক্ত হাকিম সেই পুতুলের গলায় গামছার ফাঁস বেঁধে কিভাবে সে বাবাকে খুন করেছে তা অভিনয় করে দেখায়। গামছা আর দড়ি সে সাথে করে নিয়ে এসেছিল বলে জানায়। গোটা পুনর্নির্মাণ পর্বটি ভিডিওগ্রাফি করা হয়।
পুনর্নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে সাংবাদিকেরা হাকিমকে প্রশ্ন করে কি কারনে সে বাবাকে খুন করেছে? পুলিশকে সব জানিয়েছি বলে প্রশ্ন এড়িয়ে যায় অভিযুক্ত। আর একমাস পর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ছিল এতোয়ারী মিঁঞার। ইসিএল সংস্থায় কর্মরত অবস্থায় কারো মৃত্যু হলে পরিবারের একজন চাকরি পান, সেই চাকরির লোভে হাকিম তার বাবাকে খুন করেছে কিনা এই বিষয়টি এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।