আদিবাসী মৃৎশিল্পী দম্পতির হাতের স্পর্শে পূর্ণতা পাচ্ছে দেবীর মূর্তি
আমার কথা, পান্ডবেশ্বর, ১২ সেপ্টেম্বর:
বর্ষা শেষে শরতের পদার্পণ, মাঠ ঘাট নদী চড়ে কাশফুল আর শিউলি ফুলের সুগন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে মায়ের আগমনী বার্তা। আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা তারপরেই মর্ত্যে সপরিবারে আগমন ঘটবে দেবী দুর্গার। উৎসবে মুখরিত হবে বাংলা তথা আপামর বাঙালি। এ সময় নাওয়া খাওয়া ভুলে এখন প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। বাঁশ, খড়, সুতলির কাঠামোর উপর মাটির প্রলেপে ক্রমশ রূপ পাচ্ছে দেবী দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী। এই সময়ে আর দশ জন শিল্পীর মতো প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যস্ততায় সময় কাটছে মৃৎশিল্পী আনন্দ টুডু ও তার পরিবারের। আদিবাসী দম্পতির হাতের স্পর্শে পূর্ণতা পাচ্ছে সপরিবার দেবী দুর্গা। পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের নবগ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামসুন্দরপুর মোড়ের বাসিন্দা শিল্পী আনন্দ। এক চিলতে ঘরে সহধর্মিনী রাধা টুডুকে নিয়ে বসবাস তার। আদিবাসী সম্প্রদায়ের কেউ কখনো মৃৎশিল্পী হিসাবে কাজ করেনি। সেই অর্থে আনন্দই প্রথম যে মৃৎশিল্পী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
শিল্পী জানান তার বাবা ইসিএলে কাজ করতেন। বাবা মা ছাড়াও দুই ভাই ছয় বোন নিয়ে ছিল তাদের পরিবার। বলেন, “পড়াশোনায় খুব একটা মন ছিল না। অষ্টম শ্রেণী পাশ করার পরে ইতি ঘটে লেখাপড়াতে। ছোটবেলায় আসা যাওয়ার পথে দেখতাম শিল্পীরা মাটি দিয়ে তৈরি করছে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি। শিল্পীদের কাজ দেখতে খুব ভালো লাগতো। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাদের কাজ দেখতাম। তখন থেকেই মনের মধ্যে বাসা বাঁধে শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা। পাঁচ বছর বয়সেই এক শিল্পীর সহযোগী হিসাবে কাজ শুরু করি। মাটি মাখা এবং সেই মাটির তাল তৈরি করা এভাবেই হয় আমার হাতে খড়ি। বছর দশেক হলো এখন নিজেই বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করি। চার বছর আগে রাধার সাথে বিয়ে হয়েছে আনন্দের সহধর্মিনী এখন সহকর্মী হিসেবে প্রতিমা তৈরি করার কাজে সাহায্য করছে”।
রাধা টুডু বলেন “বিয়ের পর থেকেই সংসার সামলানোর পাশাপাশি স্বামীর কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করি”।
চলতি বছর ২৫ টি বড় দুর্গা তৈরি করছে এই দম্পতি। খনি অঞ্চলের বিভিন্ন মন্ডপে তাদের তৈরি প্রতিমা এবার শোভা পাবে।
এক পুজো কমিটির কর্মকর্তা বলেন গত তিন বছর ধরে শিল্পী আনন্দের কাছে তারা প্রতিমা নিচ্ছেন। শিল্পীর কাজের প্রশংসা করেন তিনি। মৃৎশিল্পী আনন্দের নাম ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে নানা দিকে।
এই প্রসঙ্গে আনন্দ বলেন “আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আমিই প্রথম মৃৎশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। আশা করি আগামী দিনে আমার সাফল্য দেখে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকেই মৃৎশিল্প পেশায় আসবে। আর সেটা বাস্তবায়িত হলে জানব শিল্পী হিসাবে আমার পরিশ্রম সার্থক হল”।