বোধন এর মাধ্যমে আজ থেকেই সরপি গ্রামের রায়চৌধুরী পরিবারের দশ আনা ছয় আনা দুর্গাপূজার সূচনা হলো
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(সরপি), ১১সেপ্টেম্বরঃ
শুক্রবার লাউদোহার সরপি গ্রামে রায়চৌধুরী পরিবারের ছয় আনা দশ আনা দুর্গা পূজোর সূচনা হলো বোধনের মাধ্যমে। সকালে স্থানীয় পুকুর থেকে আনা হল বারি , পরম্পরা অনুযায়ী ছাগ বলি, চণ্ডীপাঠ , অন্ন ভোগের আয়োজন ছিল।
বর্গী হানা থেকে গ্রামকে রক্ষা করতে অস্ত্র ধরেন সিংহবাহিনী মা দুর্গা। জনশ্রুতি, দেবীর ডান হাত কাটা পড়লে বর্গীদের দৃষ্টিহীন করে দেন তিনি। দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের সরপি গ্রামের রায়চৌধুরী বাড়ির কয়েকশো বছর ধরে এই পুজো করে আসছেন এমনই কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। বোধন এর মাধ্যমে যার সূচনা হলো আজ অর্থাৎ শুক্রবার।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান প্রায় চারশ বছর আগে স্থানীয় জমিদার অর্জুন রায়চৌধুরী পাথরপ্রতিমা সিংহবাহিনী দুর্গা পূজার সূচনা করেন। সরপি ছাড়াও কেন্দুয়া চাপবন্দি, ঝাঁঝরা, হেতেডোবা, ইছাপুর মৌজা নিয়ে ছিল শেরপুর পরগনা। এলাকার জমিদার ছিলেন অর্জুন রায়চৌধুরী। জনশ্রুতি আছে , জমিদার বাড়িতে বর্গীরা আক্রমণ করলে দেবী তাদের বাধা দেন। রাগে বর্গীরা দেবীর ডান হাত কেটে দিলে দেবী কোপে তারা অন্ধ হয়ে যায়। বর্গীদের কাছে পুরো ঘটনা জানতে পারেন বাসিন্দারা। দেবীর পাথরের কাটা হাত পড়ে থাকতে দেখেন তারা। তারপর থেকে শাখা পলা পরিয়ে গ্রামের সীমান্তে দেবীর মন্দিরে সেই হাতের পুজো হয় আজও। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস দেবী আজও সব বিপদ থেকে গ্রামকে রক্ষা করেন। পরে জমিদার নিজের মোট ষোলো আনা সম্পত্তি ছেলেদের মধ্যে দশ আনা ও ছ- আনায় ভাগ করে দেন। ভাগের পর গ্রামে পাশাপাশি দুটি আলাদা মন্দির স্থাপন করা হয়। আজও গ্রামে এক মন্দিরে প্রতিমা দশ আনার মা এবং অন্য মন্দিরের প্রতিমা ছয় আনার মা হিসেবে পূজিত হন। মন্দিরে বছর ভর নিত্য পূজা হয়। তবে মহালয়ার আগে শুক্লপক্ষের নবমী থেকে দেবীর বিশেষ পুজো শুরু হয়ে যায়। সেই দিন থেকে দশমী পর্যন্ত দুটি মন্দিরে একটানা প্রদীপ জ্বলে। নবমীর দিন সিংহবাহিনীর পুজো হয় বিশেষ জাঁকজমক সহকারে। রায়চৌধুরী পরিবারের পুজোয় অতীতের সেই পরম্পরা আজও চলে আসছে। বোধনের মাধ্যমে আজ থেকেই তার সূচনা হয়ে গেল।