পরম্পরা ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে উখড়া গ্রামের ২৫২ বছরের দক্ষিণাকালীর পূজোর সাথে
আমার কথা, অন্ডাল, ২৯ অক্টোবরঃ
ঐতিহ্য পরম্পরা ও জমকালো বিজয়ার শোভাযাত্রার জন্য বিখ্যাত উখড়া গ্রামের দক্ষিণাকালী পুজো। গ্রামের ব্যানার্জী পাড়াতে রয়েছে দক্ষিণা কালীর মন্দির। ২৫২ বছর আগে উখড়া গ্রামের ব্যানার্জী পাড়াতে শুরু হয় দক্ষিণাকালীর পুজো। এই পুজোর সূচনা করেন পরিবারের পূর্বপুরুষ প্রয়াত দীনবন্ধু মুখোপাধ্যায় ও বেণীমাধব মুখোপাধ্যায় । তারা সম্পর্কে সহোদর ভাই ছিলেন। পরিবারটির আদি বাড়ি ছিল দুর্গাপুরের ভরতপুর এলাকায়। সেই ভিটে ছেড়ে উখরা গ্রামে বসবাসের জন্য আসার সময় পূর্ব পুরুষরা সাথে করে নিয়ে আসেন পরিবারের কুলো দেবতা দক্ষিণেশ্বর কালীর বিগ্রহ। এখানে মন্দির তৈরি করে সেই মন্দিরে দক্ষিণা কালীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে শুরু হয় পুজো। কালী প্রতিমার বাঁ পা পেছনে ও ডান পা টি সামনের দিকে থাকে তাই এই কালি দক্ষিণা কালী নামে পরিচিত। পরিবারের বয়স্ক গৃহবধূ বছর সত্তরের মীনা মুখার্জি জানান পুজোর সব কাজে পুরুষদের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও অংশ নেয়। আলপনা আঁকা থেকে প্রসাদ ভোগের আয়োজন সবই করে থাকে বাড়ির মহিলারা। সূচনা কাল থেকে দীর্ঘদিন পূজোর আয়োজন হত ঘরোয়া ও ছোট পরিসরে। এখন অবশ্য পুজোর আয়োজনের পরিধি অনেক বড় হয়েছে। এবছর বৃহস্পতিবার রাতে পুজো। শুক্রবার প্রতিমা নিরঞ্জন। ঐ দিন দুপুরে পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-পরিজন বন্ধু বান্ধবদের আমন্ত্রণ করে পাত পেরে ঠাকুরের ভোগ খাওয়ানো হয় দুপুরে। প্রতিবছর দক্ষিণা কালীর বিসর্জনের শোভাযাত্রাতে থাকে বিশেষ আকর্ষণ। এবার শোভাযাত্রায় থাকছে বিখ্যাত আলোক রশ্মির বিচ্ছুরণ। প্রতিবেশী উড়িষ্যা রাজ্যের বিখ্যাত দক্ষিণা বাদ্যযন্ত্রের দল। সঙ্গে থাকছে হরিয়ানা রাজ্যের অঘড়িবাবা নৃত্য দল । জমকালো আয়োজনের কারণে দক্ষিণা কালীর বিসর্জনের দিন শোভাযাত্রায় যোগ দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিসর্জন হয় গ্রামের সুকোবাঁধ পুকুরে। পুকুরপাড়ে আলোর রশ্মির প্রদর্শনী হয়।
ব্যানার্জি পাড়াতে দক্ষিণা কালীর মন্দিরের কাছেই হয় আরো একটি কালি পুজোর আয়োজন। এই কালী “আবছা কালি” নামে পরিচিতো। ৪৩ বছর আগে এই পুজোর সূচনা হয় তৎকালীন পাড়ার কয়েকটি শিশুর উদ্যোগে। নিজেরাই মাটির ছোট প্রতিমা তৈরি করে শুরু করে পূজোর আয়োজন । পুজোর সূচনা যাদের উদ্যোগে হয়েছিল তারা এখন সবাই প্রৌঢ় । চন্দন ব্যানার্জি, শংকর মুখার্জি, আশীষ চৌধুরী, প্রদীপ চ্যাটার্জীরা জানান ছোটবেলায় হুজুগে আমরা এই পুজো শুরু করেছিলামড়। প্রতিমা থেকে কাপড় দিয়ে মণ্ডপ সবই করতাম নিজেরাই। এখন পাড়ার তরুণ, যুবকরা দায়িত্ব নিয়ে পুজোর আয়োজন করে । সূচনা কালে প্যান্ডেলে আলোর ব্যবস্থা ছিল না তাই প্রতিমা টি আবছা দেখা যেত । সেই কারণে এটি “আবছা কালি” নামে পরিচিত হয়।