বৈদিক বিজ্ঞান
আমার কথা, বিশেষ প্রতিবেদন:
(সংঘমিত্রা দাশগুপ্ত)
আন্তর্জাতিক অর্থনীতির দৌলতে আমরা সবাই এখন মিলিয়ন, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন- এই ধারণাগুলোর সাথে পরিচিত। তাহলে হিসাব করে নেওয়াই যেতে পারে যে 4.32 বিলিয়ন বছর মানে কতোটা সময়- মানুষের হিসাব অনুযায়ী এই 4.32 বিলিয়ন বছর = ঈশ্বরের এক দিন। অবাক হওয়ার
মতোই কথা। কিন্ত বেদ তাই বলছে এবং বর্তমান বিজ্ঞান তাকে সমর্থনও করে। বেদ অনুযায়ী 4.32 বিলিয়ন হিউম্যান ইয়ারস এর সমান ঈশ্বরের এক দিন, দিন মানে শুধু দিন- যদি রাত ধরা হয় তাহলে ঈশ্বরের একটা পুরো দিন রাত 8.64 বিলিয়ন হিউম্যান ইয়ারস্ এর সমান। বেদ অঙ্ক কষে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ঈশ্বরের এক দিন ( শুধু দিন) চারটি যুগে বিভক্ত। চারটি যুগ অর্থাৎ সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ এবং কলি যুগ।
সত্য যুগ – ১.৭২৮ বিলিয়ন বছর
ত্রেতা যুগ- ১.২৯৬ বিলিয়ন বছর
দ্বাপর যুগ- ০.৮৬৪ বিলিয়ন বছর
কলি যুগ- ০.৪২৩ বিলিয়ন বছর
অর্থাৎ ঈশ্বরের এক দিনের মধ্যে এই চার যুগ শুরু এবং শেষ হয়ে যাচ্ছে।তাই সেই গল্প অনুযায়ী ঈশ্বরের এক দিনের হিসাবে মানুষ তার সারা জীবন দুঃখ কষ্ট ভোগ করে আসছে।মানুষের চালাকি কি আর তার সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে ?
এখানে ঈশ্বর শব্দের জায়গায় যদি ব্রহ্মান্ড (ইউনিভার্স) শব্দটি ব্যবহার করা হয় তাহলে বোধহয় বিষয়টি অপেক্ষাকৃত সহজ বোধগম্য হবে। বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী আমরা যে ছায়াপথে (Galaxy) আছি, ব্রহ্মান্ডে এইরকম আরো ছায়াপথ আছে। বিষ্ণুপুরাণের এই দাবি বর্তমান বিজ্ঞান সমর্থন করে। কিন্ত প্রশ্ন এটাই থেকে যায় যে সেই সময় তাঁরা এটা জানলেন কি করে?
ঋকবেদের নাসদীয় সুক্তম অনুযায়ী সৃষ্টির শুরু হয়েছে “ইচ্ছা” থেকে। কার ইচ্ছা? তার উত্তরে বলা হচ্ছে ঋষিরা (Seers) মেডিটেশনের মাধ্যমে ব্রহ্মান্ডের ইচ্ছা বা শক্তিকে অনুভব করেছিলেন- যাঁকে তাঁরা বলছেন পূর্ণব্রহ্ম। এই পূর্ণব্রহ্মকে অঙ্কশাস্ত্রের ইনফিনিটি বলা যায়। কারণ বেদ বলছে এই পূর্ণব্রহ্ম থেকে সব কিছু সৃষ্টি হলেও তিনি একই রকম থেকে গেছেন। পূর্ণব্রহ্মের কোন ভাগ হয় না। যদি আমরা ইনফিনিটির কথা ভাবি তাহলে দেখবো যে ইনফিনিটির সাথে কোন কিছু যোগ, বিয়োগ বা গুণ করলে ফলাফল ইনফিনিটিই থাকে। ঠিক যেমন বেদ অনুযায়ী পূর্ণব্রহ্মকে ভাগ করা যায় না, সেইরকম ইনফিনিটিকে কিছু দিয়ে ভাগ করা যায় না।
বেদ অনুযায়ী ব্রহ্মান্ডের শব্দ ॐ। ব্রহ্মান্ডের অফুরন্ত শক্তির উৎস এই শব্দ। কিভাবে তাঁরা ॐ এর সাথে পরিচিত হয়েছিলেন তা আমাদের জানা নেই, কিন্ত বর্তমান বিজ্ঞান বলছে ॐ= mc square – এরপরেও কি বলা যায় যে বেদ শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ?
এখানেই শেষ নয়। ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের অনেক অনেক আগে তৈত্তেরীয় উপনিষদে ব্রহ্মানন্দ বল্লী অধ্যায়ে ক্রমিক অভিব্যক্তির কথা বলা হয়েছে।
কয়েকটি উদাহরণ দিলে পরিষ্কার বোঝা যাবে যে পশ্চিমি দুনিয়া যে সব আবিষ্কারের জন্য ইতিহাসে নিজেদের নাম লিখিয়ে নিয়েছে, সেই সব কিছুই ভারতের বৈদিক বিজ্ঞান অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে – বেদে শক্তির প্রতীক বলে সূর্যকে মানা হয়েছে।
যজুর্বেদ মন্ত্র 11.24 ও 11.25 এ বলা হয়েছে শক্তিকে নষ্ট করার যায় না বা উৎপন্ন করা যায় না। শক্তি কেবলমাত্র রূপান্তরিত হয়।
ঋকবেদ মন্ত্র 2.1.3, 2.1.4 এবং 2.1.6 এ বলা হয়েছে যত দেব-দেবী আছেন তাঁরা এই শক্তিরই বিভিন্ন রূপ।
যজুর্বেদ মন্ত্র 12.23 ও ঋকবেদ মন্ত্র 10.45.4 এ বলা হয়েছে শক্তির জন্যই গতি, স্থিতি ও পরিবর্তন হয়।
ঋকবেদ মন্ত্র 1.38.8 ও 1.34.9 এ বিদ্যুতের উল্লেখ পাওয়া যায়।
ঋকবেদ মন্ত্র 1.115.1, যজুর্বেদ মন্ত্র 7.42, ঋকবেদ মন্ত্র 9.114.3, অথর্ববেদ মন্ত্র 13.3.35 এ বলা হয়েছে সূর্যই সংসারকে শক্তি দিচ্ছে। সূর্যই তার আকর্ষণে সব গ্রহকে নিজের নিজের কক্ষপথে রাখছে। সূর্যের শক্তির জন্যই সংসারে জীবনী শক্তি সৃষ্টি হয়েছে।
অথর্ববেদ মন্ত্র 5.23.6 ও 4.4 এ বলা হয়েছে সূর্যের কিরণে দৃশ্য ও অদৃশ্য সমস্ত ক্ষতিকর জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়।
যজুর্বেদ মন্ত্র 18.50 এ বলা হয়েছে সূর্যের সুষুম্না নামক কিরণ চন্দ্রকে আলো দেয়, চন্দ্রের নিজের কোন আলো নেই।
এই কয়েকটি উদাহরণ তো হিমশৈলের চূড়াও নয়। কিন্ত দুঃখের বিষয়, বেশিরভাগ মানুষের কাছেই বেদ, উপনিষদ, পুরাণ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বলেই পরিচিত। যদিও ধর্মের ব্যাখ্যাও অনেকের কাছেই ধোঁয়া ধোঁয়া ( Vague)। তবে ভারতবাসী হিসাবে গর্বের সাথে আমরা বলতে পারি যে পশ্চিমি দুনিয়া আমাদের বেদ পুরাণের কাছে সভ্যতার শেষ পর্যন্ত ঋণী থাকবে।