বাঁকুড়া পুলিশের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় স্বজনদের কাছে ফিরলো আসামের “ইসমাইল”
আমার কথা, বাঁকুড়া, ৬ মেঃ
গত ৮ ই এপ্রিল ২০২৩ বড়জোড়া থানার মোবাইল ভ্যান রাত্রি প্রায় ১ টা নাগাদ টহলদারির সময় ফুলবেড়িয়ার একটি হোটেলের নিকট একজন মধ্যবয়স্ক জরাজীর্ণ শীর্ণকায় ব্যক্তিকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে। তার সারা শরীরে তখন ধুলোর চড়া আস্তরণ, চোখে করুন আর্তি। বড়জোড়া থানার পুলিশ এবং সিভিক ভলেন্টিইয়াররা অভূক্ত মানুষটির শুশ্রুষার দায়িত্ব নেয়। তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বড়জোড়া সুপার সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করে। অনেক জিজ্ঞাসার পর ওই ব্যাক্তি নিজের নামটুকু বলেছিলো “ইসমাইল”, আর বাকি কিছুই বলতে পারেনি। বিভিন্ন জায়গায় ছবি পাঠিয়ে তার বাড়ির খোঁজার চেষ্টা চলছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নততর চিকিৎসার জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন হয়। যোগাযোগ করা হয় বাঁকুড়া থানার সঙ্গে। বাঁকুড়া থানার সহযোগিতায় ওই ভবঘুরে ব্যাক্তিকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গোবিন্দনগর পুলিশ ক্যাম্পের প্রতিদিনের তত্বাবধানে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওই ব্যাক্তির চিকিৎসার সমস্তরকম ব্যবস্থা করা হয়। সেখানকার চিকিসৎকরা জানান ওই ব্যাক্তির বাঁ পায়ে অস্ত্রপচারের প্রয়োজন আছে।
অবশেষে তার বাঁ পায়ের অস্ত্রপচার সফল হয় এবং একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন। বারংবার জিজ্ঞাসা করার পর একদিন তিনি তার পুরো নাম ও বাড়ির সদস্যদের নাম এবং ঠিকানা বলতে সমর্থ হন। সম্প্রতি পুলিশের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয় সুদূর অসম রাজ্যের বঙাইগাঁও জেলায়। যোগাযোগ সফলও হয়। আজ প্রায় এক মাস পরে তার বাড়ির লোকজন বাঁকুড়া হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়। তাঁদের থেকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে বিগত ছয় মাস আগে ইসমাইল বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিল ইসমাইল। তাকে বহু খোঁজার প্রচেষ্টা চালালেও তারা ইসমাইলকে খুঁজে পাইনি। তারা লোকাল পুলিশের কাছে এই ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করে। যখন তার বাড়ির লোক একেবারেই তাকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলো ঠিক তখন ই তাঁদের কাছে ইসমাইলের খবর পৌঁছায়। আজ বাঁকুড়া হাসপাতালের চিকিৎসকদের সফল চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে ইসমাইল ক্রমশ সুস্থতার পথে। আজ বড়জোড়া থানা এবং বাঁকুড়া থানার পুলিশের উপস্থিতিতে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনহারা ইসমাইলকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় এবং বড়জোড়া থানার পক্ষ থেকে তার হাতে একটি ওয়াকার তুলে দেওয়া হয় দ্রুত আরোগ্য লাভ করার কথা চিন্তা করে। মুখে একরাশ হাসি নিয়ে ভবঘুরে ইসমাইল রওনা দিল তার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
এরকম সব ইসমাইলদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তাঁদের বাড়ির লোকেদের কাছে পৌঁছে দেবার লক্ষে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সদাই তৎপর।