সত্যঘটনা অবলম্বনে
………. ……….. ক্রাইম ডায়েরী…………
পান্নালাল গোস্বামী
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক
সময়টা ১৯৯২ সাল। ওই সালের আগস্ট মাসে আমি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তমলুক সাব ডিভিশনের তমলুক থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম। ওই মাসে একদিন রাধামনি বাজারের ইউনাইটেড ব্যাংকের শাখায় দুঃসাহসিক ব্যাংক ডাকাতি হয়। চার জনের একটি ডাকাতের দল আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ব্যাংকের ভল্ট থেকে পঁচাত্তর হাজার টাকা ডাকাতি করে। এরপর দুটি বাইকের করে তাঁরা নরঘাটের দিকে পালিয়ে যায়। তখনকার দিনে গ্রামীন ব্যাংকের শাখায় সর্বোচ্চ পঁচাত্তর হাজার টাকা রাখা যেতো। থানার ল্যান্ড ফোনে(তখন মোবাইল ফোন চালু ছিল না) খবর পেয়ে আমি আমার জিপ গাড়ি ও পুলিশ ফোর্স নিয়ে রওনা দিই। ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে প্রাপ্ত খবর অনুসারে ব্যাংকে তদন্তের কাজ করতে নির্দেশ দিয়ে আমি মেচেদা হলদিয়া হাই রোড ধরে নরঘাটের দিকে রওনা দিই। নরঘাটের ব্রিজ পেরিয়ে পথচারীদের কাছে জানতে পারি দুটি বাইক অতি দ্রুততার সাথে হাইরোড ছেড়ে ডানদিকে চন্ডীপুর থানার চাকনান গ্রামের দিকে গেছে। সেই প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে আমি জোরে জিপ চালিয়ে গ্রামে পৌঁছোই। সেখানে বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি যে চাকনান গ্রামের পোস্টমাস্টার অমিয় মাইতির বাড়িতে বাইকে করে চারজন লোক এসেছিল। কিন্তু প্রায় ঘন্টা খানেক আগে তারা বেরিয়ে গেছে। আমি চাকনান পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার অমিয় মাইতির সাথে কথা বলি। অমিয় মাইতি তার বাড়িতে লোক আসার ব্যাপার অস্বীকার করেন এবং প্রকাশ করেন যে গ্রাম্য রাস্তার ঠিক উল্টো দিকে লালু পড়িয়া নামে এক ব্যাক্তির বাড়িতে দুটি বাইকে করে তিনজন লোক এসেছিল এবং কিছুক্ষণ আগে চলে গিয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ লালু পড়িয়ার বাড়ি রেইড করি কিন্তু লালুকে পাওয়া যায়নি। তখন আমি লালু পড়িয়ার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে লালু পড়িয়ার স্ত্রী স্বীকার করে যে কিছুক্ষণ আগে তার স্বামী তিনজন সঙ্গী সহ এসেছিল কিন্তু চলে গেছে। লালুর স্ত্রী আরো জানায় যে তার স্বামী সঙ্গীদের নিয়ে আগে পোস্টমাস্টারের বাড়িতে গিয়েছিল এবং অনেকক্ষণ ছিল। লালু পড়িয়ার বাড়ি তল্লাশী করে কিছু না পাওয়ায় পুনরায় পোস্টমাস্টারের বাড়ি তল্লাশী করি। কিন্তু সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। আমার ধারনা হয় লালু পড়িয়া তার সঙ্গীদের নিয়ে ঐ ব্যাংক ডাকাতিটি করেছিল, এবং পোস্টমাস্টার অমিয় মাইতির নিশ্চিত এর সাথে কোনো যোগ আছে। আমি তারপর ঐ পোস্টমাস্টারকে গ্রেফতার করি এবং লালু পড়িয়ার স্ত্রীকেও গ্রেফতার করি। ওই দুজনকে সাতদিনের পুলিশী হেফাজতে নিই। হেফাজতে থাকাকালীন দুজনকেই দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করি। পাঁচদিন পর জেরায় জর্জরিত হয়ে উভয়েই লালু পড়িয়া ও তার সঙ্গীদের ব্যাংক ডাকাতির কথা স্বীকার করে যে ব্যাংক ডাকাতির পঞ্চাশ হাজার টাকা ও ডাকাতিতে ব্যবহার করা দুটি সার্ভিস রিভলভার ও একটি খেলনা পিস্তল একটি ব্যাগে ভরে বাড়ির পাশে জল ভর্তি ডোবাতে ফেলে রেখেছে। এরপর আমি দুজনকেই গাড়িতে চাপিয়ে চাকনান গ্রামে পুনরায় যাই এবং তাদের দেখানো পাশের ডোবাতে তল্লাশী করে একটি ব্যাগ উদ্ধার করি। ব্যাগ খুলে দেখি তার মধ্যে বিভিন্ন অঙ্কের মোট পঞ্চাশ হাজার টাকা, দুটি সার্ভিস রিভলভার ও একটি খেলনা পিস্তল আছে এবং সেগুলিকে উদ্ধার করি সঙ্গে ব্যাংক ডাকাতির কিনারা করি। কিন্তু লালু পড়িয়া পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হইনি।