প্রশাসন ভাত ঘুমে, গ্রিন ট্রাইবুন্যালকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এখনো দুর্গাপুরে চলছে সাদা পাথর পাচারের কাজ
আমার কথা, দুর্গাপুর, ৮ অক্টোবর:
(দ্বিতীয় পর্ব)
বর্ষীয়ান থেকে যুব নেতা বা ব্লক সভাপতি, কিংবা দুর্গাপুর রেঞ্জের বনদপ্তরের আধিকারিক কিংবা জেলা ভূমি আধিকারিক, সকলের জ্ঞাতার্থেই রাতের অন্ধকারে ট্রাকের পর ট্রাক, ট্রাক্টেরের পর ট্রাক্টর অবৈধ সাদা পাথর(গ্র্যাবেলস) পাচার হয়ে যাছে। সব কিছু জেনেও কেন প্রশাসনিক কিংবা রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন তা নিয়ে জোর সওয়াল তুলেছেন দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের হেতেডোবা, বাঁশগড়া আর দুর্গাপুরের কমলপুরের বাসিন্দাদের একাংশ। তাদের অভিযোগ, বনদপ্তরের জায়গা থেকে যেভাবে মাটি খুঁড়ে পাথর বের করা হচ্ছে তাতে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বনাঞ্চল। গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, ফলে ভূমিক্ষয় হচ্ছে, গাছ ভেঙ্গে পড়ছে, বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ ২০১৮ সাল থেকে ওই এলাকা থেকে ভূমি দপ্তর পাথর খননের অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারাধীন। ন্যাশানাল গ্রিন ট্রাইবুন্যালে পাথর তোলা নিষিদ্ধ। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন চলছে এই অবৈধ পাচার কর্ম।
১৫ সেপ্টেম্বর আমাদের “সময়ের ধ্বনি” সংবাদপত্র ও ১৭ সেপ্টেম্বর আমাদের ওয়েব নিউজ পোর্টাল “আমার কথা”তে বিষয়টি সংবাদের আকারে বের হয় আর এই অবৈধ খনন ও পাচারের বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের নজরেও আনা হয়। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন জেলা ভূমি আধিকারিক। কিন্তু তারপর কেটে গেছে আরো অনেকগুলি দিন। অথচ একইভাবে চলছে এই পাথর চুরি আর পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা কোনো এক অজানা কারনে চোখে এঁটেছেন ঠুঁলি।
২০১৮ সালে ওই এলাকাগুলিতে বৈধ খনন বন্ধ হতেই চালু হয় অবৈধ খনন আর পাচার বলে অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের। ভোর থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত্য চলে খননের কাজ। সন্ধ্যের পর ট্রাক্টর, ডাম্পার ও বড় গাড়িতে করে তা পাচার করা হয় স্থানীয় কলকারাখানা সহ ভিন রাজ্যেও। ছোট গাড়িতে ৩০০ আর বড় গাড়িতে প্রায় ৬০০ সিএফটি পাথর পাচার করা হয় আর প্রতি ১০০ সিএফটি পাথরের দাম পড়ে প্রায় ৯ হাজার টাকা। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পাথর পাচার হচ্ছে বলে সুত্র মারফত জানা গিয়েছে। ফলে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বনাঞ্চল, লাখ লাখ টাকার রাজস্বও লুট হচ্ছে সরকারের।
জেলা ভূমি আধিকারিক সন্দীপ টুডুকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এতদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পাচার কাজে কেন রাশ টানা হয়নি তা নিয়ে ফের জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বিষয়টি “হাইকোর্টের বিচারাধীন বিষয়” বলে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। এদিকে ওই জায়গাগুলি বনদপ্তরের আওতাধীন তাই দুর্গাপুর রেঞ্জের আধিকারিক বুদ্ধদেব মন্ডলকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি শুনেছি। আমার অফিসারদের দেখতে বলেছি বলে দায় সেড়ে ফেলেন। এতো গেল প্রশাসনিক কর্তাদের প্রতিক্রিয়া। এবার শুনে নেওয়া যাক রাজনৈতিক নেতা বা ব্লকের দায়িত্ব যাদের উপর রয়েছে তাঁরা কি বলছেন।
হেতেডোবা ও বাঁশগড়া এলাকা নিয়ে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের সভাপতি সুজিত মুখার্জি বলেন, হেতেডোবায় কোনো পাথরের অবৈধ কারবার হয় না। বাঁশগড়ায় কিছু জায়গায় হলেও তিনি ফরিদপুর(লাউদোহা) থানার ওসিকে জানালে তিনি সেই সব জায়গায় পাথর তোলা বন্ধ করিয়ে দিয়েছেন। তবে সুজিতবাবুর থেকে বিষয়টি জানার পর আমাদের প্রতিনিধি খোঁজ খবর করে জানতে পারেন কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি। পাথর খননের কাজ একই রকম ভাবেই চলছে।
এদিকে কমলপুর এলাকাটি পড়ছে দুর্গাপুর ১নং ব্লকে। ওই ব্লকের সভাপতি রাজীব ঘোষ বলেন, তিনি জানেন এই অবৈধ কারবার বহুদিন চলছে আর এর পেছনে প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে পুলিশ প্রশাসনের। কিন্তু তিনি কেন ব্লক সভাপতি হিসেবে কোনো পদক্ষেপ করেননি কেন জিজ্ঞেস করা হলে রাজীববাবু মানবিকতার সাথে বলেন, ওই এলাকায় বহুদিন ধরে অনেকদিন আদিবাসী পরিবার এই অবৈধ কারবার করে পরিবার প্রতিপালন করছে। তাই তিনি সব জেনেও কিছুই বলছেন না।
বিজেপি নেতা তথা দলের মুখপাত্র জিতেন চ্যাটার্জি বলেন, এই পাথর চুরি একটা বড় ইস্যু। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গ্র্যাভেলস পাচারের কাজ সংগঠিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলছে পুলিশ, প্রশাসন ও শাসকদলের একাংশের প্রছন্ন মদতে। এই কাজের সাথে যারা যুক্ত তাদের দাপটে ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলতে পারে না। তবে এবার এই বিষয়টি আমি ন্যাশানাল গ্রিন ট্রাইবুন্যালের নজরে এনে মামলা করবো।
তবে পরিবেশ বাঁচাতে ও রাজস্ব লুট রুখতে অবিলম্বে পাচার বন্ধ করা হোক বলে সরব হতে শুরু হয়েছে স্থানীয়দের একাংশ। প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ না নিলে আগামীদিনে নিজেরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন তাঁরা।
ক্রমশ……