সত্য ঘটনা অবলম্বনে- “একরত্তি মেয়েটি কি করে পৌঁছোলো চৌবাচ্চায়?”
*সত্য ঘটনা অবলম্বনে*
পান্নালাল গোস্বামী
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক
ঘটনা ২০০৭ সালের জুলাই মাসের। আমি তখন দুর্গাপুরে সি.আই হিসেবে কর্মরত। দিনটা ৩/৭/২০০৭। তৎকালীন দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শঙখ বিশ্বাস মোবাইল মারফত খবর দেন এ-জোনের ডিএসপির একটি কোয়ার্টারে তিন মাসের এক কন্যা সন্তানকে ওই বাড়ির চৌবাচ্চার জলে ভাসমান অবস্থায় দেখা গেছে। এই খবর পাওয়া মাত্রই আমার সরকারী গাড়ির ড্রাইভার মৃত্যুঞ্জয় সিংহকে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আসার জন্য সত্তর নির্দেশ দিই। অত:পর আমি ডিএসপির কোয়ার্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। গিয়ে দেখি তিন মাসের একটি কন্যা সন্তান বাড়ির লাগোয়া একটি জলভর্তি চৌবাচ্চায় ভাসছে। আমি দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠাতে বলি।
ঘটনার তদন্তে জানা যায় ওই কন্যা সন্তানটি এক দম্পতির প্রথম সন্তান। কিন্তু ওই দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো সুত্র পাওয়া যায় না। দম্পতি জানায় রাতে তিনজন এক সাথেই ঘুমিয়ে ছিল, এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বাচ্চাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করার পর চৌবাচ্চার জলে ভাসতে দেখে এবং পুলিশে খবর দেয়। ওই মৃত্যুর ব্যাপারে একটা হত্যা মামলা রুজু করে একজন সসব ইনস্পেক্টরকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করি যে পরদিন অর্থাৎ ৪/৭/২০০৭ আমার ১৫ দিনের ইএল ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। আমার পুত্রের পায়ের একটি অপারেশনের জন্য। ওই অপারেশন চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। সেই জন্য আমি ওই দিন ছুটিতে যেতে বাধ্য হই। পরিতাপের বিষয় যে, আমি ছুটি থেকে কাজে যোগদান করেই ওই কেসটির খবর নিয়ে জানতে পারি ওই কেসের কোনো রকম উন্নতি হয়নি। ৫-৬ মাসেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় সরকারী অনুমতি নিয়ে মামলাটি বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাটি আজও মনে পড়লে মন অশান্ত হয়ে ওঠে। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারনে মনে মনে অনুতপ্ত হই। সেই সঙ্গে কিছু প্রশ্ন মনে নাড়া দিয়ে ওঠে। অত সকালে সবার ঘুম থেকে ওঠার আগে মা বাবার চক্ষু আড়াল হয়ে বাচ্চাটি কিভাবে চৌবাচ্চায় পড়ল?