২-০ এর লক্ষ্যে ভোট ময়দানে সেনাপতির ভূমিকায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি
আমার কথা, দুর্গাপুর, ১০ এপ্রিলঃ
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল, বিজেপি কিংবা সিপিএমের প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ কি দুর্গাপুরের দুটি বিধানসভার উপরেই নির্ভর করছে সেই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক মহলের মতে যেহেতু ২০১৯ লোকসভাতে দুর্গাপুরের দুটি বিধানসভা ভোট নির্ণায়কের ভূমিকা নিয়েছিল তাই কোন রাজনৈতিক দলই সেই জমি ছাড়তে রাজী নয়। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা বিজেপি তো নয়ই। তৃণমূল সূত্রে খবর বিজেপিকে কোনঠাসা করার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় আনার কাজ গোপনে শুরু করে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ।
২০১৯ লোকসভা ভোটের নিরিখে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের যে সাতটি বিধানসভা আসন তার মধ্যে বর্ধমান দক্ষিণ, মন্তেশ্বর, বর্ধমান উত্তর, ভাতার, গলসি এই পাঁচটা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস পায় মোট ৪৭২১০৫ টি ভোট, অন্যদিকে বিজেপি পায় ৩৯৭৮৪২ টি ভোট। অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে ছিল ৭৪২৬৩ ভোটে। শুধুমাত্র দুর্গাপুর পূর্ব ও দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র দুটিতে বিজেপি ভোট পায় ১৯৯৬০৮ টি ভোট সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ১২৩৫০৬ টি ভোট। ফলে বিজেপি এগিয়ে থাকে ৭৬১০২ টি ভোটে। মোটের উপর এই দুটি কেন্দ্র ও পোস্টাল ব্যালটের উপর ভর করেই বিজেপি প্রার্থী প্রায় আড়াই হাজার ভোটে জিতে যায়। এদিকে কীর্তি আজাদ প্রার্থী হওয়ায় দুর্গাপুর এলাকার দুটি বিধানসভার ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের অনুকূলে যাবে বলে আশা নেতাকর্মীদের। ফলে ফের জোড়া ফুলে হাওয়া লাগতে চলেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় সূত্রে খবর যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল চলছে তাতে আখেরে লাভ হচ্ছিল বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের। কিছুদিন আগেই তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে নিয়ে কোন্দলের জেরে অ্যাডভান্টেজ নেয় বিজেপি। ফলে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ্বিজেপিকে ব্যাকফুটে পাঠানোর লক্ষ্যে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে সেই সেনাপতির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন জেলাসভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বর্তমানে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর অরবিন্দ এভিন্যুতে জেলার কার্যালয়ই হয়ে উঠেছে সভাপতির বাসস্থান। সেখানেই দিন রাত এক করে নির্বাচনী কাজ সহ চলছে সাংগঠনিক কাজকর্মের কর্মযজ্ঞ। রাত ২-২.৩০ পর্যন্ত্য সেখানে দলীয় কর্মীদের সাথে প্রতিনিয়ত চলছে শলা পরামর্শ । তবে শুধু চার দেওয়ালের মধ্যে নয়, সারা জেলার শহর থেকে গ্রাম, গলি থেকে রাজপথ, বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি। শুনছেন তাদের সমস্যার কথাও। একদিকে আসানসোল কেন্দ্রে ফের জোড়া ফুল ফোটানো, অন্যদিকে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রটিকে পুনরুদ্ধার করে তা দলনেত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়া, এটিকে পাখির চোখ করে দৌড়োচ্ছেন জেলার এই সেনাপতি। তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় সূত্রে খবর, নরেন চক্রবর্তীর লড়াই একদিকে যেমন বিজেপির সঙ্গে অন্যদিকে নিজের দলের একাংশের সঙ্গেও। ফলে দ্বিমুখী লড়াই কিভাবে তিনি সামাল দেন সেই দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
এ-বিষয়ে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই কটাক্ষ করে বলেন, “নরেন্দ্রনাথ বাবু যতই দাবি করুন না কেন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে আর থাকবে। পিসিবিএল কারখানার ঘটনাই বলুন বা আমরাইতে প্রার্থীর প্রচারের ঝামেলাই বলুন বার বার প্রমান করে দিচ্ছে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে। শাক দিয়ে তো আর মাছ ঢাকা দেওয়া যায় না। তাই তো জেলা সভাপতি হয়েও আসানসোল ছেড়ে নরেন্দ্রনাথবাবুকে দুর্গাপুরে পরে থাকতে হচ্ছে। আর উনি যতই বলুন না কেন, আমাদের প্রার্থী দিলীপ ঘোষের জয় নিশ্চিত, ওনাদের দলই দিলীপবাবুকে জিতিয়ে দেবে।”