ঘরের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপি প্রার্থী এস.এস আহলুওয়ালিয়া
আমার কথা, মুনমুন দত্ত, ১০ এপ্রিলঃ
অবশেষে আসানসোলে প্রার্থী বদলে দিলো বিজেপি। বুধবার নামের জট কাটিয়ে ভোজপুরী গায়ক পবন সিংয়ের বদলে বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী দিলো ভূমিপুত্র এস এস আহলুওয়ালিয়াকে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, নিজ ভূমে যুদ্ধটা কি সহজ হবে এই বিজেপি প্রার্থীর জন্য?
২০১৪ ও ২০১৯ পর পর দুবার এই কেন্দ্রটিতে পদ্মফুল ফুটিয়েছিল গেরুয়া শিবির। আর দুবারই বিজেপির জয় এসেছিল বাবুল সুপ্রিয়োর হাত ধরে। ২০১৪ বাবুল সুপ্রিয়ো তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনকে হারিয়ে সত্তর হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। এর কারন হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর কাজ করেছিল সেই সময়। এক) মোদি ঝড়,দুই) বাবুল সুপ্রিয়োর স্টারডম, তিন) হিন্দিভাষী ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন, চার) তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
এরপর ২০১৯ সালেও সেই একই ফ্যাক্টর কাজ করে যার দরুন দ্বিতীয়বারেও বাবুল সুপ্রিয়োর হাত ধরে ওই কেন্দ্রটি নিজেদের দখল রাখে বিজেপি। প্রায় তিনগুন ভোটে মুনমুন সেনকে হারিয়ে জয়লাভ করেছিলেন এই বলিউড গায়ক। এই ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত্য আসানসোল কেন্দ্রে যতদিন বাবুল সুপ্রিয়ো সাংসদ হিসেবে ছিলেন ততদিন তিনি তৃণমূলকে বেশ ব্যাতিব্যস্ত করে রেখেছিলেন বলে মনে করে রেখেছিলেন বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। কোথাও প্রার্থী আক্রান্ত হোক কিংবা যে কোনো কর্মসূচির প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন বাবুল। অর্থাৎ আসানসোলে সংবাদের শিরোনামে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেছিলেন তৎকালীন ওই সাংসদ। এরই মধ্যে ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে জিতলেন ভুমিকন্যা অগ্নিমিত্রা পাল। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবরে বাবুল সুপ্রিয়ো যখন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন আসানসোলের হাল ধরলেন আগ্নিমিত্রা। তিনিও বাবুলের মতোই গোটা এলাকাতে দৌড়ে বেড়াচ্ছিলেন। রীতিমতো তৃণমুলকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছিলেন। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তবে তারই মাঝে ২০২২ সালে আসানসোল কেন্দ্রে উপনির্বাচন হল যেখানে ফলাফল গেল পুরো উল্টে। বাবুল যে ব্যবধানে বাবুল তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন প্রায় একই ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রাকে (তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে) পরাজিত করে বলিউডের আরেক অভিনেতা বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা। যদিও এই আসানসোলে বলতে গেলে বিজেপির নিজস্ব কোনো সেভাবে সংগঠন নেই। যারা আছেন তাদের মধ্যে রয়েছে দুটি গোষ্ঠী। অগ্নিমিত্রা ও জিতেন গোষ্ঠী। ফলে আসানসোলে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে ব্যাপক হারে। এদিকে এই কেন্দ্রে এবার জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে প্রার্থী করা হলো না। তাই তিনি এস এস আহলুওয়ালিকে কতটা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছে বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা। পাশপাশি অগ্নিমিত্রা মেদিনীপুরের প্রার্থী হয়ে আসানসোলের বাইরে চলে গেছেন। ফলে অগ্নিমিত্রার অনুগামীরা বর্তমানে অভিভাবকহীন। শুধু তাই নয়, ২০২২ সাল থেকে শত্রুঘ্ন সিনহা সাংসদ তহবিল থেকে এখনো পর্যন্ত্য ১৩ কোটি টাকা উন্নয়ণ খাতে ব্যয় করেছেন বলে একটি শ্বেতপত্রও ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও বর্তমানে আসানসোলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও সংগঠনের দিক থেকে তাঁরা বিজেপির তুলনায় শক্তিশালী। উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রের সারটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটি কেন্দ্রেই জয়লাভ করেছিল তৃণমূল। আরো একটি বিষয় রউয়েছে যা চ্যালেঞ্জ দিতে পারে আহলুওয়াক্লিয়াকে, তা হল আসানসোলে বেশ কিছু শিখ সম্প্রদায়ের মানুশজনের বাস। এদিকে আহলুওয়ালিয়াও নিজে শিখ। কিন্তু বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর শিখ সম্প্রদায়কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারনে তাঁর এখনও অসন্তুষ্ট বিজেপির প্রতি যা আহলুওয়ালির জ্যের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সুত্রের খবর। তাছাড়া অনেক আগে থেকে শত্রুঘ্ন সিনহার নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়ার কারনে প্রচারেও অনেকটাই সময় পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও দার্জিলিং কিংবা বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে সাংসদ থাকাকালীন তাঁকে সেভাবে পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ ছিল বিজেপির অন্তর্মহলে। দুর্গাপুরে তাঁর নামে ‘নিখোঁজ’ পোস্টারও পড়েছিল। সেই হিসেবে অ্যাডভান্টেজ পাচ্ছেন শত্রুঘ্ন সিনহা। ফলে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এস এস আহলুওয়ালিকে বলে মনে করছেন ওয়াকিওবহাল মহল। এখন প্রশ্ন উঠছে এখন দেখার বিষয় ভূমিপুত্র হিসেবে আসানসোল কেন্দ্রটি পেলেও এতসবের জাঁতাকলে বাংলায় নিজের জয়ের ধারা কি অব্যাহত থাকবে দুবারের সাংসদ সুরিন্দরজিৎ সিং আহলুওয়ালিয়ার?