১৭ ঘন্টা দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ঘুরে বেড়ালেন করোনা রোগী, অপসারন সুপারের
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান, ১৫জুলাইঃ
রিপোর্ট পজিটিভ জানার পরেও প্রায় সতেরো ঘন্টা প্রসূতি বিভাগে অন্যান্য রোগীদের সাথেই সেই প্রসূতিকে রেখে দিয়ে তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছিল দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাসের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সরা ক্ষোভও প্রকাশ করেন সুপারের বিরুদ্ধে। এরপরেই ২৪ ঘন্টা পেরোতে না পেরোতেই সুপারের বদলির নির্দেশ আসে। করোনা আবহে এহেন ঘটনায় বেশ সোরগোল ফেলে দেয় শিল্পাঞ্চলে। একদিকে সরকারী হাসপাতালের সুপারের এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরনে রীতিমতো নিন্দায় সরব হয়েছেন শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা আবার তেমনই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত ওই রোগীর অন্যান্য রোগীদের সাথে ঘন্টা কাটানোয় বেশ আতঙ্ক ছড়িয়েছে হাসপাতালে ভর্তি অন্যান্য রোগী, রোগীর পরিজন ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে।
প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক কৌস্তুভ চ্যাটার্জীর অভিযোগ,৭জুলাই প্রসূতি বিভাগে এক রোগী ভর্তি হন যার মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখে সন্দেহ হওয়ায় ৮জুলাই তাঁর লালারসের নিমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা জন্য পাঠানো হয়। সোমবার রাত সাড়ে নটায় হাসপাতালের মেইলে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু অভিযোগ হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস সেই তথ্য সকলের থেকে গোপন তো করেনই সাথে ওই রোগীনিকে প্রসূতি বিভাগে অন্যান্য রোগীনিদের সাথেই রেখে দেন। কিন্তু প্রসূতি বিভাগের অন্যান্য চিকিৎসক ও নার্সদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা একপ্রকার জোর করেই মেইল পরীক্ষা করেন আর দেখেন যে ওই মহিলার রিপোর্ট পজিটিভ। এদিকে ততক্ষণে ওই মহিলা অপারেশন থিয়েটার সহ হাসপাতালের আরো কিছু জায়গায় ঘুরে ফেলেছেন। আর তা জানাজানি হতেই এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তাঁরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুপারের বিরুদ্ধে। তাদের আরো অভিযোগ সুপারের এই তথ্য গোপনের কারনে আজ হাসপাতালের মধ্যে অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল ভাবে দেখা দিয়েছে। যদিও গত জানুয়ারী মাসেই দেবব্রতবাবুর বদলি হয়েছিল আর তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডাঃ ধীমান মন্ডল। কিন্তু বিভিন্ন কারনে তিনি দায়িত্বভার নিতে না পারায় দায়িত্বভার সামলাচ্ছিলেন দেবব্রতবাবু। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতির একাধিক অভিযোগ উঠছিল। তার মধ্যে করোনা রোগীনির এই ঘটনা চরম মাত্রা পায়। এরপরেই স্বাস্থ্যদপ্তর নড়েচড়ে বসে আর রাতারাতি সিদ্ধান্ত নিয়ে এই হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় দেবব্রত বিশ্বাসকে। আপাতত দায়িত্ব সামলাবেন ওই হাসপাতালেরই ডেপুটি সুপার ডাঃ ইন্দ্রজিৎ মাজি।
এদিকে সুপারের এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরনের বিষয়টি চাউড় হতেই সুপারের বিরুদ্ধে সরব হন শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের বামেরা। সুপার দেবব্রত দাসের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি সাথে কোভিডের প্রটোকল না মানায় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইনে মামলা রুজু করা হয় নিউটাউনশিপ থানায়।