দুর্গাপুরেও “আধারে আঁধার” নেমে এলো
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২৮ ফেব্রুয়ারী:
পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের ১৬ নং ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লী এলাকার বাসিন্দা রীনারানী দাস(৫০)। ৪ই/১৫ নং বাড়িতে বসবাস করেন রীনারানীদেবী। তিনি বিধবা, রাজ্য সরকার থেকে বিধবা ভাতা পান। তাই রীনাদেবী এই মুহুর্তে আতঙ্কে আছেন যে আধার বাতিল হয়ে গেলে যদি বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে যায়? ফেব্রুয়ারী মাসের ১৫ তারিখে তিনি ইউআইডিএআই থেকে চিঠি পান যে তার আধার কার্ডটি নিষ্ক্রিয় তাই এটিকে বাতিল করা হয়েছে। চিঠি পেয়েই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সাথে সাথে আধারের সাইটে ঢুকলে সেখানে রীনাদেবীর আধারের কোনো অস্তিত্বই মিলছে না। তিনি বিধবা, রাজ্য সরকার থেকে বিধবা ভাতা পান। তাই রীনাদেবী এই মুহুর্তে আতঙ্কে আছেন যে আধার বাতিল হয়ে গেলে যদি বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে যায়?
তবে শুধু দুর্গাপুর নয়, কাঁকসা, জামালপুর, নদীয়া, দ: ২৪ পরহণা, এমনকি উত্তরবঙ্গেরও একাধিক জায়গায় আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
আসলে আধার কার্ড নিয়ে যেন সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি একেবারে চরমে। সেই আশঙ্কা কার্যত আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। আধার বাতিলের চিঠি আসছিল বিভিন্ন এলাকায় এমনটাই খবর। এরপরই বিভিন্ন এলাকায় বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকে। এদিকে অনেকের মনেই আশঙ্কা হতে থাকে যদি আধার কার্ডে কোথাও কোনও ভুল থাকে তবে হয়তো আধার বাতিল হয়ে যেতে পারে। এরপরই আধার কার্ড সংশোধনের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। সব কাজ ফেলে আধার কার্ড সংশোধনের জন্য লাইন দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আসলে রাতের ঘুম উড়ে যাচ্ছে অনেকের, শুধু আধারের চিন্তায়। এমনকী আধার সংক্রান্ত গন্ডগোল থাকলে যদি দেশ থেকে বের করে দেয় সরকার সেই আশঙ্কার জেরেই আধার সংশোধনের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
মালদা থেকে মালবাজার, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্র এই ছবি। তবে আধার কার্ড বাতিল হলেও তা ফের চালু হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু বাস্তবে কী হবে সেটাই এখন দেখার। তবে ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন আধার নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। এদিকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই আধার বাতিলের চিঠি এসেছে বলে খবর। সেকারণেই আতঙ্কের প্রহর গুণতে শুরু করেন অনেকেই। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটা নিয়ে আতঙ্ক যেন কিছুতেই কাটছে না। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এনিয়ে বিভ্রান্তির কোনও ব্যাপারই নেই। খুব দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।
এদিকে আধার ইস্যুতে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, আধার নিষ্ক্রিয় হলেও রাজ্যের কোনও বাসিন্দাকে সমস্যায় পড়তে হবে না। গত কয়েকদিন ধরে আধার অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করে বাংলা। এমনই একটি চিঠি গিয়েছিল পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা বনকাটি পঞ্চায়েতের কাঁকসার এগারো মাইলের আশা বিশ্বাসের কাছে। পরীক্ষর ফর্ম ফিলআপ করতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর আধার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। পরেরদিন তাঁর হাতে চিঠি আসে। এর জেরে তাঁর পরীক্ষায় বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে সেই পড়ুয়াকে এবার পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়েছে। তবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার নিজে তার বাড়ি গিয়ে দেখা করে সব রকম সহায়তার আশ্বাস দেন। দুর্গাপুরের রীনারানী দেবীর পরিবার থেকে বিষয়টি নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন মহকুমা শাসকের কাছে।
এ বিষয়ে, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নমবালম বলেন, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন আধারের এই সমস্যার জন্য এই রাজ্যের কোনো মানুষ কোনো রকম সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না। যার যা সুবিধা প্রাপ্য সে সেই সুবিধাই পাবে। যাদের যাদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি গেছে, তাদের সকলকেই আমাদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে সরকার থেকে যেমন যেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেই অনুযায়ী তাদের সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে।