বেনাচিতির গুরুদ্বয়ারায় গেলেন বিজেপি প্রার্থীরা, শিখদের সমর্থণ কি পেলেন?
আমার কথা, দুর্গাপুর-আসানসোল, ১৩ এপ্রিলঃ
খালিস্তানি মন্তব্যের জেরে বিজেপি প্রার্থী গুরুদুয়ারায় গিয়েও পেলেন না শিখেদের সাড়া সন্দেশখালিতে কর্তব্যরত শিখ সম্প্রদায়ের আইপিএস অফিসার জসপ্রীত সিং কে খালিস্থানি বলে মন্তব্য করা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে বলে অভিযোগ । ঘটনাটি সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে সে সময় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের রাজনীতি । পথে নেমে বিক্ষোভ প্রতিবাদে সরব হয়েছিল শিখ সম্প্রদায় । মন্তব্যের কারণে অভিযুক্ত বিজেপি নেতার গ্রেফতার ও ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে ছিল তারা । ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে বেশ কিছুটা সময় । কালের নিয়মে বিষয়টিও অনেকটা স্মিত হয়ে এসেছিল । কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পরতে বিষয়টি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে । কয়েকদিন আগেই সেন্ট্রাল গুরুদুয়ারা প্রবন্ধ কমিটির সভাপতি তেজিন্দর সিং জানিয়ে ছিলেন ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বিজেপির কোন প্রার্থী গুরুদুয়ারাতে এলে তাকে মাইক হাতে বক্তব্য (ভোট প্রার্থনা করার) রাখতে দেওয়া হবে না । সেন্ট্রাল গুরুদুয়ারা কমিটির সভাপতির এই ঘোষণার পরও এখনও পর্যন্ত খালিস্থানি মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাননি বিজেপির কোন নেতা । কোথাতে আছে ভোট বড় বালাই, নিজের পক্ষে ভোট নিশ্চিত করতে এ সময় কম বেশি সব দলের প্রার্থীরাই বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ, গুরুদুয়ারাতে জনসংযোগ করতে যান । তেমনি গত ১৩-ই এপ্রিল শনিবার বর্তমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ দুর্গাপুরের বেনাচিতি গুরুদুয়ারাতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । প্রার্থী নিজের প্রতিনিধি মারফত সেই বার্তা পাঠান গুরুদুয়ারা প্রবন্ধ কমিটির কাছে । কমিটির পক্ষ থেকে প্রার্থীর প্রতিনিধিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় প্রার্থী এলে আপত্তি নেই, কিন্তু ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত প্রার্থী গুরুদুয়ারার ভিতর কোন রকম বক্তব্য রাখতে পারবেন না । এরপর নির্দিষ্ট সময়ে প্রার্থী দিলীপ ঘোষ গুরুদুয়ারা যান, প্রার্থনা সভাতে অংশ নেন । সবার সাথে বসে লঙ্গর খান । গুরুদুয়ারে উপস্থিত শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজনের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন । কিন্তু কোন বক্তব্য বা বার্তা না দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান গুরুদুয়ারা থেকে । কেন ভোট প্রার্থনা না করে চলে এলেন এই বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি দিলীপ বাবু । গুরুদুয়ারা প্রবন্ধ কমিটির পক্ষে তেজেন্দর সিং বলেন প্রার্থী নিজেই গুরুদুয়ারা আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে ছিলেন । গুরুদুয়ারাতে যে কেউ আসতে পারে, তাই প্রার্থীকে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল । সেই সাথে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল “খালিস্থানি” মন্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাইলে গুরুদুয়ারার ভিতর ভোট প্রার্থনা করা আর বক্তব্য রাখা চলবে না । প্রার্থী ক্ষমা চাননি তাই বক্তব্য রাখার অনুমতিও তাকে দেওয়া হয়নি কমিটির পক্ষ থেকে।
অপরদিকে, ওই একই দিনে কুলটিতে শিখ সম্প্রদায়ের বৈশাখী উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন আসানসোল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। সেখানেও তাঁর ক্ষেত্রে সেই ‘খালিস্তানি’ মন্তব্য কাঁটা হিসেবে বিঁধেছে প্রার্থীকে। তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন অনেকেই। কিন্তু অনুষ্ঠান মঞ্চের মাইক তাঁকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। সেখানে প্রার্থীর সাথে দেখা হয় কেন্দ্রীয় গুরুদুয়ারার প্রবন্ধক কমিটির প্রধান তেজেন্দর সিংয়ের সাথে। বিষয়টি নিয়ে প্রার্থীর সাথে তাঁর বাদানুবাদও হয়। প্রথম দাবি মেনে নিয়ে বিধানসভার স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। কিন্তু দ্বিতীয় দাবি এখনও পূরণ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। তিনি বলেন, “লোকসভা ভোটের জন্য বিজেপি নেতৃত্ব গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির কাছে আবেদন করছেন, তাঁদের প্রার্থী গুরুদ্বারে এসে বার্তা দিতে চান। এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, বিজেপি নেতৃত্ব গুরুদ্বারে আসতে পারেন। কিন্তু নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে তাঁরা মাইক ব্যবহার করে কোনও বার্তা দিতে পারবেন না। তেজেন্দর সিংয়ের দাবি, সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া নিজে একজন সিখ। তাঁর ধর্মের মানুষজনের বিরুদ্ধে তাঁর দলের একজন নেতার এহেন মন্ত্যব নিয়ে তাঁর নিজেরো আপত্তি থাকা উচিত। আর তা নিয়েই দুপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। তেজেনদর সিং বলেন, পরে অবশ্য সুরিন্দর বলেন, “এ ঘটনা যখন ঘটেছিল, তখন দুর্গাপুরে জানিয়েছিলাম, শিখকে খলিস্তানি বলে কেউ মন্তব্য করে থাকলে তিনি মূর্খ। তবে আমি বিশ্বাস করি, যাঁর নামে এই অভিযোগ উঠেছে, তিনি এত বড় ভুল করবেন না। ওই পুলিশ অফিসারও কিন্তু কারও নাম বলেননি”।