ভোটারদের প্রত্যাশায় চালানো হচ্ছে বুলডোজার, প্রার্থীরা ব্যস্ত ব্যাক্তি-আক্রমণে
![](https://aamarkatha.in/wp-content/uploads/2024/04/aamar-katha-6.jpg)
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২ এপ্রিলঃ
নির্বাচন শুরু হতে আর দিন কয়েক বাকি। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ভোট ১৩ মে। প্রার্থীরা জনতা জনার্দনের মন পেতে সাথে নিজেদের ভোট ব্যাংক ভরাতে সাংঘাতিক ব্যস্ত। মঙ্গলবার সারাদিনের প্রচারে যখন বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থী ব্যাক্তি-আক্রমণে ব্যস্ত তখন অন্যদিকে রুজি রোজগারহীন হয়ে গেল বেশ কিছু পরিবার। দুর্গাপুরের গান্ধী মোড়ে জাতীয় সড়কের ধারে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জমিতে তৈরী দোকানগুলি এদিন ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলল ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। ফলে দুর্গাপুরে গরম আবহাওয়ার তাপমাত্রার পারদ চড়ল তড়তড়িয়ে।
ভোট মানেই ফের প্রত্যাশায় বুক বাধেন ভোটাররা। ভাবেন আগের বার হল না। এবার যদি হয় তো। প্রতিবারই তাই ভোট মানেই তাদের প্রত্যাশা পূরণের আশায় বুক বাধা। আর এই ভোটার নামক জনতা জনার্দণদের প্রত্যশা পূরণের প্রতিশ্রুতিতে ভর করে নিজেদের নির্বাচনী বৈতরণি পার করেন প্রার্থীরা। কি প্রত্যাশা করছেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের দুর্গাপুর শহরের বাসিন্দারা?
“দুর্গাপুরের বন্ধ এমএএমসি কারখানার প্রাক্তন কর্মী তথা সাহিত্যিক রীতা সাহা দে ২৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি বলেন, “আমি এটা বলছি না ওই কারখানা আবার খুলুক। কিন্তু শিল্পনগরীতে শিল্প হোক। অনেক কল কারখানা এই শহরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন কোনো কারখানা হচ্ছে না। নতুন করে এখানে যাতে কারখানা হয় সেই বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইবো যাতে আমাদের সন্তানরা বৃদ্ধ বয়সে আমাদের একা রেখে বাইরে না চলে যায়”।
দুর্গাপুরের আইনজীবী আয়ুব আনসারী বলেন, “দুর্গাপুর ও আসানসোল আদালতের আইনজীবিরা শিল্পের ওপর ভিত্তি করে গরে উঠেছে। এই দুটি শহরের শিল্পে ভাঁটা পড়ায় শহরের ছেলে মেয়েরা বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে আইনজীবীদের কাজ কমে যাচ্ছে। শহরে সিল্পের বিকাশ ঘটলে আইনজীবীদের কাজও অনেক বাড়বে”।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্মী রাজু দত্ত বলেন, “কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। মৃত্যু নিত্তনৈমিত্ত্যিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ কারখানার আধুনিকীকরণের দিকে নজর দিচ্ছে না।”
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসসভা কেন্দ্রের জোড়া ফুল প্রতীকে প্রার্থী হয়ে সবার প্রথম প্রচারে নামেন কীর্তি আজাদ। বিরোধী প্রার্থীদের থেকে প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন বেশ কয়েক কদম বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। প্রতিদিনই লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে প্রার্থীকে ঘিরে কর্মী সমর্থকদের উচ্ছ্বাসও চোখে পড়ছে। তবে প্রচারে ছন্দপতন ঘটলো যখন বিজেপির পঞ্চম দফার তালিকাতে এই কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম জানানো হল। তালিকা প্রকাশের পরেরদিনই মেদিনীপুর থেকে সোজা এই কেন্দ্রে চলে এলেন দিলীপ ঘোষ। পরের দিন প্রাতঃভ্রমন আর জনসংযোগ একসাথে সাড়তে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর বাবাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিলেন। ব্যস ঘৃতাহুতি পড়ল যেন শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে। তখন থেকেই বিজেপি আর তৃণমূলের দুই প্রার্থী একে অপরকে নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়িতে মেতে উঠলেন। দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কীর্তি আজাদ বললেন, “দিলীপবাবুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাঁর জায়গা রাঁচীতে যাওয়া উচিত”। অপরদিকে দিলীপবাবু আরো এক কদম এগিয়ে বললেন “উনি রিটায়ার্ড ক্রিকেটার। ফর্মে নেই, কিংবা ওনাকে জামা কাপড় খুলে বাড়ি পাঠাবো”। তাঁর জবাবে কীর্তি বলেন, “শূণ্য রানে আউট করে বাড়ি পাঠাবো”। কিংবা “এলাকা শান্ত রাখুন নাহলে এক মিনিটে ঠান্ডা করে দেবো”, কিংবা ‘মহিষাসুর বলেও দিলীপ ঘোষকে আখ্যা দেওয়া। এদিকে যাদের মন পেতে এই বাক-বিতন্ডায় জড়াছেন প্রার্থীরা সেই ভোটাররা, তাঁরা কি চান? তাদের মন কি এই প্রার্থীদের একে অপরের প্রতি ব্যাক্তি আক্রমনে কি আদৌ ভিজবে?
প্রসঙ্গতঃ সোমবার পলাশডিহায় জন-সংযোগ বাড়াতে গিয়ে উচ্ছেদ প্রসঙ্গে এক মহিলার ক্ষোভের মুখে পড়ে বিড়ম্বনায় পড়েন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ সহ বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। অস্বস্তি এড়াতে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান দিলীপবাবু।