বাঁকুড়া হাসপাতালে চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মজুত স্যালাইন! এখনও কি হুঁশ ফেরেনি?
আমার কথা, বাঁকুড়া, ১ ফেব্রুয়ারীঃ
সংবাদদাতাঃ দেবনাথ মোদক
স্যালাইন কাণ্ডে উত্তাল গোটা রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু তারপরেও কি হুঁশ ফিরেছে? বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তার খোঁজ নিতে গিয়ে রীতিমত শিউরে উঠতে হল। স্যালাইনের মতো চিকিৎসার জীবনদায়ী সরঞ্জাম যেভাবে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজের স্টোরে মজুত করা রয়েছে, তা স্বাস্থ্যকর নয়।
উল্টে জীবাণু সংক্রমণ ঘটাটাই স্বাভাবিক বলছেন রোগী ও রোগীর পরিজনেরা। সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না স্টোর কর্তৃপক্ষও। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে বিষ স্যালাইনে মৃত্যু হয় এক প্রসূতির। অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও চারজন। সেই ঘটনার পর দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বড় সরকারি হাসপাতাল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। সব মিলিয়ে এই হাসপাতালে বেড সংখ্যা প্রায় ১০০০। হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে দৈনিক প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করেন এই হাসপাতালে। কিন্তু সেই হাসপাতালে অন্যতম চিকিৎসার সরঞ্জাম স্যালাইন যেভাবে মজুত করা হয় তা দেখে রীতিমত অবাক হতে হয়।
হাসপাতালে সরবরাহ করা ওষুধের মূল স্টোর ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছে। হাসপাতালের একটি সুলভ শৌচালয়ের ঠিক পাশেই অবস্থিত রোগীর পরিজনদের বিশ্রামাগার। আর তা দখল করে সেখানে তৈরি করা হয়েছে স্যালাইন স্টোর। সেই স্টোরে না আছে বাতানুকুল ব্যবস্থা আর না রয়েছে যথেষ্ট আলো। প্রায় অন্ধকার সেই রুমে পেটির পর পেটি সাজিয়ে রাখা রয়েছে স্যালাইন। স্যালাইন স্টোরের চারিদিকে ঘিরে রয়েছে শৌচালয়ের নর্দমা। নোংরা আবর্জনায় আটকে পড়া সেই নর্দমা থেকে চুঁইয়ে পড়া জলে আংশিক ভিজে রয়েছে স্টোরের বাইরের দিকের দেওয়াল। স্টোরের চারিদিকে জমে রয়েছে পাহাড়প্রমাণ আবর্জনা। স্টোরের অধিকাংশ জানালা বন্ধ করা যায় না। ফলে রাত হোক বা দিন অধিকাংশ জানালা আংশিক খোলাই থাকে। যা দিয়ে বছরের অন্যান্য সময় সুর্যের আলো আর বর্ষায় বৃষ্টির জলের ছাঁট ঢুকে পড়ে স্টোরের মধ্যে। এমন অস্বাস্থ্যকর রুমে মজুত থাকা স্যালাইনে যে কোনও সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ। আশঙ্কায় রোগী ও রোগীর পরিজনেরা।
স্যালাইন স্টোরের অনুপযুক্ত পরিবেশের কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে হাসপাতালের স্টোর কর্তৃপক্ষও। এই স্টোরের পরিবেশে স্যালাইনে জীবানু সংক্রমণের আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেনি স্টোর কর্তৃপক্ষ। তাহলে জেনেশুনে কেন এমন ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে? কর্তৃপক্ষের দাবি আগে স্যালাইন অন্যত্র মজুত করা হত। কিন্তু সম্প্রতি সেই স্টোরে অক্সিজেন মজুত করায় অস্থায়ী ভিত্তিতে বিশ্রামাগারের একটি রুমে তা মজুত করা হচ্ছে। নতুন করে স্টোর তৈরির কাজ চলছে। দ্রুত সেই নতুন স্টোরে তা মজুর করা হবে। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্টোর ইনচার্জ অনিশ রঞ্জন শীট বলেন, “ওই ঘরে স্থায়ী ভাবে থাকবে না। কয়েকদিন পরই সরিয়ে নেওয়া হবে।”