সংলাপ শায়েরী দিয়ে জনসভা মাতালেন সায়নী
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(লাউদোহা), ২৭ নভেম্বরঃ
লাউদোহার ঝাঁঝরা কলোনী মাঠে কর্মী সম্মেলন সভা করেছিল বিজেপি। সেই সভাতে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, মিঠুন চক্রবর্তী সহ অন্যরা। সভা-তে তারা রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে রবিবার একই জায়গায় বিরোধীদের জবাব দিতে পাল্টা সভা করল তৃণমূল কংগ্রেস। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা, বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, হরেরাম সিং, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ সহ অন্যরা। বক্তৃতায় নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন গতকাল বিজেপির সভা থেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তিনি নাকি বিজেপি কর্মীদের হাত কেটে দেবেন ? পাল্টা তিনি বলেন তৃণমূল সন্ত্রাসের রাজনীতি করে না। আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করা হয়েছে তার প্রমাণ দেখাতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেবো বলে মন্তব্য করেন নরেন্দ্রনাথ বাবু। পাশাপাশি তিনি বলেন আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায় একটিও আসন বিজেপি পাবে না।
আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন বিজেপি পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতায় আসার দিবা স্বপ্ন দেখছে। মমতা ব্যানার্জি ২৫ বছর টানা মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। পরের প্রজন্মের নেতা অভিষেক ব্যানার্জীর নেতৃত্বে আরো ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন আগামী পঞ্চাশ বছরেও বিজেপির পূরণ হবে না ।
এরপরই বক্তৃতা দেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। বিরোধী নেতাদের কটাক্ষ ও সংলাপ আর শায়েরী-তে সভায় উপস্থিত দলের কর্মীদের উজ্জীবিত করেন তিনি । বলেন “বিজেপির স্লোগান সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস। আর শেষে করেন দেশের সর্বনাশ।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সায়নী বলেন সুকান্তকে আমি নেতা বলেই মনে করিনা। ও রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর ওদের দল ১০ ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। দলের অন্য নেতারা রাজ্য সভাপতির কথাকে গুরুত্বই দেন না। রাজ্য সভাপতির কাজ কি সেটাই এখনো সুকান্ত মজুমদার বুঝে উঠতে পারেনি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গে বলেন যেমন বাঁশ তেমন ঝাড়। এই বাঁশ কোন কাজে লাগে না। নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য কখনো বলেন জানুয়ারি মাস আসুক, কখনো বলেন ডিসেম্বর মাস এলে সরকারটাই থাকবে না। করার কিছু ক্ষমতা নেই শুধু মুখে বড় বড় কথা বলে। সায়নী বলেন অভিনেতা হিসেবে মিঠুন চক্রবর্তীকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তার মেরুদণ্ডহীন রাজনৈতিক আদর্শ দেখলে দুঃখ হয়। শুনেছিলাম প্রথম জীবনে তিনি নাকি নকশাল করতেন। পরে জ্যোতিবাবুর ঘনিষ্ট হয়েছিলেন। সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় উনি বুদ্ধ বাবুর সঙ্গে বৈঠক করে সিপিএমের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যেই তৃণমূল ক্ষমতায় এলো তিনি ( মিঠুন চক্রবর্তী ) মমতা ব্যানার্জির কাছে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। মমতা তাকে রাজ্যসভার সদস্য করেছিলেন। কিছুদিন পরেই তার মনে হল বিজেপিতে গেলে তার লাভ বেশি। তাই এখন তিনি বিজেপি দলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। মিঠুনের বিখ্যাত সংলাপ গোখরা সাপ সম্পর্কে সায়নী বলেন গোখরা সাপ মারতে পশ্চিমবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে কার্বলিক অ্যাসিড রাখা আছে। সায়নী আরো বলেন যতদিন মমতা ব্যানার্জি থাকবেন এই রাজ্যে বিজেপির শনির দশা ঘুচবে না। গত বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিজেপির দিল্লির নেতারা বলেছিলেন এইবার দু’শ পার। বাংলার মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়ে বিজেপিকে বাংলার বোর্ডার পার করে দিয়েছে। তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন বিজেপি দলটা জুমলা পার্টি। ভোটের আগে ভুরিভুরি প্রতিশ্রুতি দেয়, আর ভোট শেষ হলেই সব প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়। বলেন মমতা ব্যানার্জি দেশের একমাত্র নেত্রী যিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন। কতকাল বিজেপির সভায় যে ভিড় হয়েছিল আজকের তৃণমূলের সভা-তে তার চারগুণ বেশি ভিড় হয়েছে বলে তৃণমূল নেতাদের দাবি।