পুলিশের মানবিক মুখ, মূল স্রোতে ফিরলেন দুর্গাপুরে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ২৬মেঃ
একজন পুলিশের কাজ শুধু অপরাধী ধরাই নয়, সমাজের বুকে ঘটতে থাকা অপরাধ দমনও। অর্থাৎ একজন মানুষকে অপরাধী হওইয়া থেকে বিরত রাখা। এরকমই একজন্দুঁদে গোয়ান্দা পুলিশের মানবিক মুখ দেখলো শহর দুর্গাপুর। পরিবারহীন মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে এক ঞ্জীর স্থাপন করলে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিসনারেটের গোয়ান্দা বিভাগের পুলিশ মনোরঞ্জন মন্ডল।
জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেনাচিতি বাজারের মহিষ্কাপুর প্লটে বসবাস করতেন বিপুল কান্তি চক্রবর্তী। ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার করতে হয় তার পচাগলা দেহ। স্ত্রী বিগত হয়েছেন তারও বছর তিনেক আগে। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই একমাত্র ছেলে অর্ণব কান্তি চক্রবর্তী মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার মৃত্যুর পর ভারসাম্য আরো হারায়। সম্পূর্ণ একা বিপর্যস্ত বছর তিরিশের অর্ণব তখন প্রায় রাস্তায়। সেই সময়ে অর্ণব নজরে পড়েন বর্তমানে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিক মনোরঞ্জন মণ্ডলের। শ্রীরামপুরে অর্ণবের মামাদের খবর দেওয়া হলে তারাও দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। অসহায়, তীব্র মানসিকভাবে অসুস্থ অর্ণবকে উদ্ধার করে মনোরঞ্জনবাবু হাজির করেন দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে। বিচারকের নির্দেশে সরকারি হেফাজতে ও নিজে দেখভালের দায়িত্বে মনোরঞ্জনবাবু অর্ণবকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করেন। ভাড়া বাড়িতে রেখে অর্ণবের আসবাবের কাস্টডি দেওয়া হয় বাড়ি মালিককে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রীজ করে দেওয়া হয় যাতে তা কেউ না হাত দিতে পারে। প্রথম দুই মাস নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে দেন মনোরঞ্জনবাবু। নিয়ম করে খোঁজও নেন অর্ণবের। প্রায় দশ বছর পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলো অর্ণব। বৃহস্পতিবার অর্ণবকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে নিয়ে আসেন দুঁদে গোয়েন্দা অফিসার মনোরঞ্জন মণ্ডল। মূল স্রোতে ফিরে আসতে পেরে খুশি অর্ণব জানান, ” কোথায় যে হারিয়ে যেতাম জানি না। আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করিয়েছেন উনি। উনি আমার কাছে ভগবান।” এদিকে মনোরঞ্জন মণ্ডল জানান, ” মানবিক দিক থেকেই এটা করেছি। তৃপ্তি পেয়েছি। এটা আমাদের কর্তব্য।”