লকডাউনে কর্মহীন বাবা, পরিবারের অন্ন সংস্থানের জন্য মাস্ক বিক্রি করছে বেনাচিতির আমন

আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান, ৪এপ্রিলঃ
কথাতেই আছে পেটের জ্বালা বড় জ্বালা, আর এই জ্বালার কাছে করোনার মতো ভাইরাসের আতঙ্কের কোনো জায়গাই নেই দুর্গাপুরের দিনমজুর পরিবারের ছেলে ছোট্ট আমনের কাছে, সে যতই ভয়ানক হোক না কেন। তাই তো পেটের খিদে মেটাতে এই করোনা ভাইরাস সংক্রমনের হাত থেকে বাঁচতে সুরক্ষা সামগ্রী হিসেবে সকলে যখন নিজেদের মুখ ঢাকছেন মাস্কে তখন ওই ছোট্ট আমন নিজের প্রাণের পরোয়া না করে নিজের মুখ খোলা রেখে অন্যের প্রাণের সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রিতেই ধ্যান বেশী। হ্যাঁ ঠিক এই ছবিই ধরা পড়ল আজ দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে। আর এই ছবি থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠল যে করোনার থাবায় সব থেকে বেশী যদি কেউ রক্তাক্ত হচ্ছে তো এই আমনদের মতো দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলো।
বেনাচিতির জলখাবার গলির বস্তির বাসিন্দা বছর এগারোর আমন গুপ্তার বাবা পেশায় দিনমজুর। লকডাউনের জেরে রুজি রোজগার একেবারেই বন্ধ। আর তাই সংসার প্রতিপালনের গুরু দায়িত্ব নিজের ছোট্ট কাঁধে তুলে নিয়েছে আমন। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড়ের তাগিদে মাস্ক বিক্রি করতে পথে নামতে হয়েছে তাঁকে। লোকজন করোনার হাত থেকে বাঁচতে মাস্ক কিনে পড়ছে, কিন্তু মাস্ক বিক্রেতা আমনের নিজের মুখে নেই সেই সুরক্ষা কবজ। থাকবে কি করে? আমন জানে একটি মাস্কের দাম ৩০টাকা যা এই মুহূর্তে তার পরিবারের কাছে অনেক। তাই ৩০টাকার কাছে খুবই নগণ্য ছোট্ট আমনের জীবনের মূল্য। বেনাচিতি বাজারের এরকম একটি ঘটনা আজ রেখে গেল বেশ কিছু প্রশ্ন। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ হয়ত একদিন শেষ হবে। কিন্তু এই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো কি অতি সহজে ফিরতে পারবে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে? প্রশ্ন তো এও উঠল যে প্রশাসনের হাজারো চেষ্টা কি ঠিক মতো পৌঁছোতে পারছে হতদরিদ্র ওই অসহায় মানুষগুলির কাছে?