দিনে দুপুরে নিজের অফিসে আততায়ীর গুলিতে ঝাঁঝরা সুদ ব্যবসায়ী
আমার কথা, আসানসোল, ১৫ এপ্রিলঃ
দিনে দুপুরে অফিসে ঢুকে এক ব্যবসায়ীকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে খুন করল এক দুষ্কৃতি। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে, কুলটির চিনাকুড়ি এলাকায়। মৃত ব্যবসায়ীর নাম উমাশঙ্কর চৌহান(৫১)। উমাশঙ্কর পেশায় সুদ ব্যবসায়ী ছিলেন।
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, চিনাকুড়িতে বসবাসকারী উমাশঙ্করের অফিস ছিল তাঁর বাড়ির কাছেই। বেলা পৌণে বারোটা নাগাদ তিনি অফিসে বসে ছিলেন। সাথে ছিলেন অফিসেরই তাঁর এক সঙ্গী রাজকুমার। সেই সময় মুখে কাপড় বাঁধা এক যুবক অফিসে ঢুকে উমাশঙ্করকে বলেন রাহুল পাসওয়ান নামে জনৈক এক ব্যাক্তির বকেটা টাকা মেটাতে এসেছেন। উমাশঙ্কর তাঁকে জানান, তিনি রাহুল নামে কাউকে চেনেন না। তখন ঐ যুবক কিছুটা দূরে গিয়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলে। কথা শেষ করে পুনরায় ফিরে আসে এবং উমাশঙ্করের অফিসের কাঁচের দরজার বাইরে থেকে আলোপাথারি গুলি চালাতে শুরু করে। গুলির আঘাতে কাঁচের দরজা ভেঙ্গে যায়। প্রায় ৫৬ রাউন্ড গুলি উমাশঙ্করের গায়ে লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক উমাশঙ্করকে মৃত বলে জানান। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। প্রাথমিক অনুমান টাকা পয়সার লেনদেনের কারনেই এই খুন। তবে আসল কারন তদন্তের পরেই জানা যাবে বলে জানিয়েছে কুলটি থানার পুলিশ। তাছাড়া অফিসে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে। সেটি খতিয়ে দেখেও আততায়ীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
আগামী ১৩ মে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন রয়েছে, ঠিক তার আগেই ভোটের মুখে এই ধরনের ঘটনা ঘটায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে এডিপিসির ডিসি ওয়েস্ট আশীষ মৌর্য জানিয়েছেন, গুলি কাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিক পর্যায়ে সিসি টিভির ফুটেজ ও তথ্য খতিয়ে দেখছে। একই সাথে অফিসের অন্যান্য কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথেও কথা বলা হবে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখবে। অন্যদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমান্তের ডুবুরডিহি চেক পোষ্টে নাকা তল্লাশি আরো বেশি আঁটো সাঁটো ও তীব্র করা হয়েছে। এদিন ঝাড়খন্ড গামী গাড়ি থামিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নাকা তল্লাশি চালানো হয়। তবে নির্বাচনের আগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।ঘটনার খবর পেয়ে এলাকা পরিদর্শনে যান কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার। বলেন ঘটনাস্থলের কিছু দূরেই রয়েছে স্কুল। এই ঘটনার জেরে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের, অভিভাবকদের মনে নিরাপত্তার প্রশ্নটি তীব্র হয়ে উঠেছে। দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এলাকা। প্রতিদিনই বোমা গুলি উদ্ধার হচ্ছে। চিনাকুড়ি অঞ্চলে এর আগেও শুটআউটের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের উচিৎ অবিলম্বে তদন্তের মাধ্যমে মূল দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা। তারা দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করবেন ভোটের সময় প্রতিটি বুথের ভিতরে ও বাইরে যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে অজয় পোদ্দারের এই বক্তব্যকে নস্যাৎ করেছেন কুলটি ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি বিমান দত্ত। তিনি বলেন, পশ্চিম বাংলায় যথেষ্ট পরিমানেই শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনও যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। বাম জমানার থেকে বর্তমানে সমাজে অপরাধ প্রবনতা কমেছে। পুলিশ প্রশাসন দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থাও করছে। তারপরেও দুই একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটছে। তবে কি কারণে এই শুটআউট তা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ!!ঘটনাস্থলে কুলটিথানার পুলিশ সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ অধিকারীকেরা।