কোল ইন্ডিয়া ফুটবল টিমে সুযোগ দিনমজুরের ছেলের, গর্ব দুর্গাপুরের
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ১৭জুনঃ
এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারত – আফগানিস্থানের ম্যাচ প্রায় শেষের মুখে। স্কোর লাইন তখনও ০ -০। ফ্রি-কিক থেকে সুনীল ছেত্রী গোল করতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে অভিরাজ রাম হুর-রে বলে চিৎকার করে বলে ‘গোল করেছে গুরু।’ দুর্গাপুরের লেবারহাট এলাকার বাসিন্দা একাদশ শ্রেণীর ছাত্র অভিরাজ রাম ছোট থেকেই ফুটবল পাগল। তাঁর আদর্শ ফুটবলার সুনীল ছেত্রী। অভিরাজ স্বপ্ন দেখে একদিন সে বাংলা দলের হয়ে সন্তোষ ট্রফি ও দেশের জার্সি গায়ে ফুটবল খেলবে। স্বপ্ন পূরণ করতে ভর্তি হয় দুর্গাপুর গ্যামন ব্রিজ ফ্রেন্ডস ক্লাবের ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বল আয়ত্তে নিয়ে মাঠের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত দৌঁড়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে একের পর এক গোল করে তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে। মিড ফিল্ডার হিসাবে বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠল অভিরাজ। গত কয়েক মাস আগে সুপ্রিয় দাস নামে একজন ফুটবল প্রশিক্ষকের নজরে পড়ে অভিরাজ। তাঁর পরামর্শে সম্প্রতি কলকাতা ময়দানে ট্রয়াল দিতে যায় অভিরাজ। সুযোগ মেলে কোল ইন্ডিয়া টিমে। চলতি মরসুমে কোল ইন্ডিয়ার হয়ে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে অভিরাজ। কলকাতা লিগে খেলার জন্য এখন নিয়মিত ময়দানে অনুশীলন করছে অভিরাজ। শনি ও রবিবার ছুটিতে দুর্গাপুরের বাড়িতে আসে। দুর্গাপুর থেকে কলকাতা ময়দানের জার্নির রাস্তাটা কিন্তু খুব একটা মসৃন ছিল না অভিরাজের। বাবা পরমানন্দ রাম দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন সব্জির পাইকারী বাজার সেন মার্কেটে মুটের কাজ করেন। ট্রাক থেকে সব্জি লোডিং আনলোডিং করেন। তিন মেয়ে দুই ছেলে, স্বামী – স্ত্রী মিলিয়ে সাত জনের সংসার। মুটের কাজের সামান্য রোজগারে সংসারে নুন আনতে পান্ত ফুরানোর জোগাড়। ছেলে অভিরাজ ফুটবল খেলে সাফল্য পেয়েছে। এখন কলকাতা ময়াদানে খেলছে। কিন্তু কখনও মাঠে গিয়ে ছেলের খেলা দেখেননি পরমানন্দ। একটু ভাল খাবার, বুট, জার্সি এসব কিছুই দিতে পারেন নি অভিরাজের বাবা। পরমানন্দ বলেন ‘মুটের কাজ করে সামান্য রোজগার করি। ছেলের আবদার মেটানো সম্ভব নয়। ভাল খেলে শুনেছি। এখন কলকাতায় খেলছে। মাঝে মধ্যে ২০০ – ৪০০ টাকা খরচ দিই।’ক্লাবের দেওয়া খেলার সরঞ্জামই ভরসা ছিল অভিরাজের। দামি বুট পায়ে পরার সৌভাগ্য এখনও হয় নি তাঁর। প্রশিক্ষক সুপ্রিয় দাস কলকাতায় একটা জায়গা করে দিয়েছেন। সেখানেই থাকে অভিরাজ। সকালে ময়দানে অনুশীলন করলে কোল ইন্ডিয়া থেকে খাবার দেয়। তাতেই দিনের বেলা চলে যায়। রাতে নিজের পয়সায় হোটেলে কোনরকমে একটু খেয়ে নেয়। অভিরাজের কথায় ‘কলকাতা ময়দানে খেলার সুযোগ পেয়েছি যখন আর পিছনে ফিরে তাকাতে চাই না। যেমন করে হোক সুনীল ছেত্রীর মত বড় প্লেয়ার হতে হবে আমাকে। বাবা কিছু টাকা দেয় তাতে রাতের খাবার হয়ে যায়। গ্যামন ব্রিজ ক্লাব থেকে হাত খরচ বাবদ কিছু টাকা দেয় তাতে যাতায়াতের খরচ চলে যায়। খরচ – খাওয়া এসব কোনও ব্যপার নয়। লক্ষ্য একটাই ভাল খেলতে হবে।’গ্যামন ব্রিজ ক্লাবের সেক্রেটারি মুকুট নাহা বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের অনেক প্লেয়ার কলকাতা লিগ খেলেছে। কিন্তু অভিরাজ রাম খুব অল্প বয়সে কোল ইন্ডিয়ার মত টিমে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমাদের কাছে গর্বের।