বিবাহিত জেনেও সংসার করতে চাওয়ায় স্বামীর হাতে খুন হতে হল আইভিকে, অন্ডালে ঘটনার পুনর্নিমানে সেই বর্ণনাই দিলো বিক্রম
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(অন্ডাল), ৩১জুলাইঃ
দ্বিতীয় বিয়ে জেনে যাওয়ার পরেও স্বামীর কাছে গিয়ে সতীনের সাথে ঘর করতে চাওয়ার জেদের জন্যই কি জীবন দিতে হল আইভিকে? ব্যাপারটা ঠিক তাই, পুলিশী জেরায় সেটাই স্বীকার করে আইভির শিক্ষক স্বামী বিক্রম। শুধু পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি নয়, যে মেয়েকে মন্দিরে নিয়ে দেবতাকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিল সেই স্ত্রীকেই কিভাবে নিজের হাতে খুন করেছিল তাঁর পুরো বর্ননা দেয় বিক্রম। আজ অর্থাৎ শুক্রবার বিক্রমকে সাথে নিয়ে ঘটনার পুনর্নিমান করে অন্ডাল থানার পুলিশ।
শুক্রবার দুপুর ৩টে, পুলিশ বিক্রমকে সাথে নিয়ে পৌঁছোয় উখরার সুভাষ পাড়ায় বিক্রমের বাড়িতে। সেখানে সে পুলিশকে জানায় আইভিকে খুন করার সময় যে জামাটা পড়েছিল সেই জামাটা সে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে। বিক্রমের বয়ান অনুযায়ী তাঁকে নিয়ে পুলিশ যায় উখরার আনন্দমোড়ের অবিচল শ্মশানে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় রক্তমাখা জামাটি। এরপর বিকেল ৫টা নাগাদ বিক্রমকে সাথে নিয়ে পুলিশ কাজোরায় বিক্রমের দ্বিতীয় স্ত্রী মৃতা আইভির বাড়িতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর বিক্রম জানায় ঘটনার দিনে ধাপে ধাপে কিভাবে আইভিকে সে খুন করে।
সে জানায় ঘটনার দিন বিকেল ৪টে নাগাদ আইভির বাড়িতে যায় বিক্রম। সোজা চলে যায় বাড়ির দোতলাতে। প্রথমেই দেখা হয় আইভির ঠাকুরমা মায়ারানি হাজরার সাথে। তাঁকে প্রনাম করে বিক্রম। এরপর সে বাথরুমে যায়। বাথরুম থেকে বেরোনোর পর এরপর আইভির সাথে বচসায় জড়িয়ে পরে বিক্রম। আইভির একমাত্র দাবি বিক্রমের কাছে যে তাঁকে যেন বিক্রম নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। কারন সে আর নিজের বাড়িতে নয় বিক্রমের সাথে তাঁর বাড়িতে থেকে সংসার করতে চায়। কিন্তু তাতেই ঘোরতর আপত্তি দোজবর বিক্রমের। কারন তাঁর প্রথমপক্ষের স্ত্রী ইতিমধ্যেই বিক্রমের দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানতে পেরে তাঁকে আইনের ভয় দেখাতে শুরু করে। ফলে একদিকে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দিক থেকে আইনী চাপের দরুন ভীত বিক্রম আইভির থেকে এবার মুক্তি পেতে চাইছিল। তাঁর ওপর আইভির স্বামীর সংসার করার বায়নার চাপ। সব মিলিয়ে মেজাজ হারায় বিক্রম। এদিকে আইভি আর বিক্রমের কথা কাটাকাটির আওয়াজ গিয়ে পৌঁছোয় ঠাকুরমা মায়ারানীদেবীর কানে। তিনি এসে নাত জামাই ও নাতনিকে শান্ত করতে গেলে ক্ষিপ্ত বিক্রম হাতে কাছে পরে থাকা একটি কাঠের টুকরো তুলে নিয়ে মায়ারানীদেবীর মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে যান তিনি। এরপর সেই কাঠ দিয়ে আইভিকেও মারধর শুরু করে বিক্রম। কাঠের আঘাতে মাথায় চোট পায় আইভি আর তাতে জ্ঞান হারায় সেও। আইভির পা ধরে বিক্রম টানতে টানতে এরপর দোতলা থেকে নিচের তলায় নিয়ে যায়। আইভির মাথা থেকে তখন রক্তক্ষরণের কারনে পুরো সিঁড়িতে রক্তের দাগও লেগে যায়। এরপর আইভিকে বিছানার উপর শুয়ে একটি ধারালো ছুরি দিয়ে কোপাতে শুরু করে সে। এতেও শান্ত হয় না বিক্রম। মৃত্যু পুরোপুরি নিশ্চিত করতে এরপর আইভির শরীরে পেট্রোল ঢেলে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর বিক্রমের কাজের একমাত্র সাক্ষী আইভির ঠাকুরমাকে দেখতে দোতলায় ফের যায় বিক্রম। তখনও সংজ্ঞাহীন মায়ারানীদেবীকে দেখে বিক্রম ভাবে যে ঠাকুরমারও মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই সে আইভির বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যায় অবিচল শ্মশানে। সেখানে জামাটি খুলে লুকিয়ে রেখে ফিরে যায় নিজের বাড়িতে।
প্রসঙ্গতঃ খান্দরা প্রতিবন্দী কেন্দ্রে কম্পিউটারের শিক্ষকতা করত বিক্রম রায়। সেখানেই আইভির সাথে প্রথমে পরিচয় আর তার থেকে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়ায় দুজনে। কিন্তু আইভির প্রেমে সেই মুহূর্তে হাবুডুবু খাওয়া বিক্রম ঘূণাক্ষরেও জানতে দেয়নি আইভিকে যে সে ইতিমধ্যেই বিবাহিত ও এক ছেলের বাবা। এরপর আইভিকে বিয়ে করে বিক্রম। বিয়ের পর যখন আইভিকে বিক্রম নিজের বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে কাজোরাতে তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকার কথা বলে তখন থেকেই সন্দেহ শুরু হয় আইভির। এরপর পরিস্থিতির চাপে পড়ে আইভিকে বিক্রম পুরোটাই খুলে জানায় যে আইভি তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। প্রথম বিয়ের বিষয়টি আইভির কাছে প্রকাশ পাওয়ার পরেও স্বামীর বাড়িতে গিয়ে সংসার করতে চায় আইভি যা বিক্রমের পক্ষে সেই চাওয়াটা পূরন করা কোনো মতেই সম্ভব হচ্ছিল না। এদিকে কোনোভাবে বিক্রমের প্রথম পক্ষের স্ত্রী জেনে যান তাঁর স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি। তখন থেকেই দুই স্ত্রীর মাঝে পরে মানসিকভাবে চাপ তৈরি হচ্ছিল বিক্রমের। সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে অবশেষে পথের কাঁটা আইভিকেই পথের থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনা মাথায় আসে বিক্রমের। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ। এক লালসাময় পুরুষের কামনার শিকার হয়ে শেষে নিজের জীবনটাকেই বিসর্জন দিতে হল আইভিকে। নাতনির এই অকাল মৃত্যু যার কারনে ঘটল সেই বিক্রমের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন ঠাকুরমা মায়ারানী হাজরা।