ক্যানেলের পাড়ে ছেলের ব্রাস পড়ে থাকতে দেখে বার বার ঝাঁপালেও হল না শেষ রক্ষা, দুর্গাপুরে জলে তলিয়ে মৃত্যু একমাত্র সন্তানের
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ১২আগস্টঃ
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, আদর করে নাম রেখেছিলেন বিশ্বজিৎ, অর্থাৎ বিশ্বকে যে জয় করে নেয়। কিন্তু বিশ্বকে জয় করার মতো সেই সময় বোধহয় বিধাতা ছোট্ট বিশ্বজিৎকে দেয়নি, তাই অকালেই চলে যেতে হল তাকে। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই মায়ের কোল খালি করে চলে গেল খুদে শিশুটি। বাবা বাপ্পা চক্রবর্তী রোজ সকাল সকাল কাজে যান সেটা জানত সাড়ে তিন বছরের বিশ্বজিৎ। আজ হয়ত বাবার ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হচ্ছিল তাই খুদে বিশ্বজিৎ বাবাকে ডেকে তুলেছিল কাজে যাওয়ার জন্য। বাবার সামনেই বিশ্বজিতকে মা বলেছিল দুধ খেয়ে নিতে কিন্তু ছোট হলেও সে জানত যে সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে তারপর কিছু খেতে হয় আর এই মুখ ধোয়ার তাড়নাই প্রাণ কেড়ে নিলো ওই অবোধ শিশুটির। বাবা মায়ের কর্মব্যস্ততা আর অন্যমনস্কতার মধ্যে বাড়ি পেছনে হয়ত ক্যানেলের জলে হয়ত মুখ ধুতে গিয়েছিল বিশ্বজিৎ আর তলিয়ে মৃত্যু হল ওই এক রত্তি শিশুটির।
দুর্গাপুরের কোকওভেন থানার অন্তর্গত সুকান্তপল্লীতে স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল গাড়ি চালক বাপ্পা চক্রবর্তী। প্রতিদিন সকাল সকাল কাজে বেরিয়ে যান বিশ্বজিতের বাবা। বাড়িতে মায়ের সাথেই থাকত বিশ্বজিৎ। কিন্তু আর পাঁচটা দিনের মতো আজকের দিনটা শুরু হলেও দিন এগোতেই ছন্দপতন ঘটল। সকাল থেকেই স্বামী স্ত্রী ব্যাস্ত হয়ে ছিলেন কাজে। সকাল ৮টা ৩০ নাগাদ যখন হুঁশ ফেরে আর খোঁজ পরে বিশ্বজিতের তখন বাবার বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। কোথায় গেল তাঁর ছেলে? খোঁজ করতে করতে ক্যানেলের পাড়ে এসে দেখেন বিশ্বজিতের ব্রাসটা পরে রয়েছে। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে ক্যানেলে জলে ঝাঁপ দিয়ে আঁতিপাঁতি করে খুঁজলেও সন্ধান মেলেনি ছেলের। এরপর প্রশাসনের কাছে খবর গেলে বিপর্যয় মোকাবিলার দল এসে ক্যানেলের জল থেকে বিশ্বজিতের নিথর দেহটি উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় এই আশায় যে ছোট্ট শরীরটাতে যদি একটুও প্রাণ থেকে থাকে। কিন্তু বিধাতার লিখন খন্ডাবে কে? ক্যানেলের জল আর বাবা মায়ের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই যে ছোট্ট ফুটফুটে বিশ্বজিতের প্রাণ কেড়ে নিল।