দুর্গাপূজোয় এখনো আসেনি ডাক , দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ঢাক শিল্পীরা
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(লাউদোহা), ১৩সেপ্টেম্বরঃ
কাশফুল, ঢাকের বোল, মন্ত্র উচ্চারণ এর মাধ্যমে শুরু হয়ে গেছে মায়ের বোধন। মাঝে আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা, তারপরেই আপামোর বাঙালি মেতে উঠবে দূর্গা উৎসবে। কিন্তু এই উৎসবের আবহেও মন ভালো নেই ঢাক শিল্পীদের। বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে এখনো অনেক শিল্পী ডাক পায়নি। ডাক আসবে কি আসবে না সে আশঙ্কাতেই দিন কাটছে শিল্পী ও তাদের পরিবারের।
করোনা অতিমারির কারণে দেশে হয়েছে দীর্ঘ লকডাউন। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এখন চলছে আনলক পর্ব। তবে সবকিছু কবে স্বাভাবিক হবে সেই বিষয়ে নেই কোনো নিশ্চয়তা। লকডাউন এর ফলে অনেকে কাজ হারিয়েছে, বাধ্য হয়ে অনেকের বদলে গেছে জীবিকা, আবার অনেকের জীবনে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তায়। ঢাক শিল্পীদের জীবনও ব্যতিক্রম নয়। করোনার প্রভাব পড়েছে তাদের জীবিকাতেও। তাই পূজার মৌরসুমেও মন ভালো নেই ঢাক শিল্পীদের। লাউদোহা ব্লকের গৌরবাজার গ্রামের শিল্পীরা এমনটাই জানালেন। এই গ্রামের উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া ও বাদ্যকর পাড়ায় বসবাস করেন প্রায় দুশোটি ঢাক শিল্পী পরিবার। ঢাক বাজানোই হচ্ছে তাদের প্রধান জীবিকা। বংশ পরস্পরায় তারা এই শিল্পের সাথে যুক্ত।
সত্তর বছরের প্রবীন শিল্পী বেনু বাদ্যকর, গোসাই বাদ্যকর, সমীরণ বাদ্যকর জানান- বছরের বিভিন্ন সময়ে ছোট-বড় বিভিন্ন পূজো অনুষ্ঠানে ডাক পান তারা ঢাক বাজানোর জন্য। এই পেশার উপার্জন থেকেই চলে সংসার। বংশ পরস্পরায় তারা এই কাজ করে আসছেন বেশ কয়েক পুরুষ ধরে। কিন্তু করোনা অতিমারির কারনে এ বছর প্রভাব পড়েছে তাদের পেশায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনাড়ম্ভে কোনো মতে হচ্ছে বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠান। জমায়েত হতে পারে এই আশঙ্কায় সেইসব পূজা অনুষ্ঠানে ডাক পাচ্ছেন না ঢাকিরা। শিল্পী বেনু বাদ্যকর বলেন দুর্গাপুজোর আশায় অপেক্ষায় থাকি সারা বছর । কারণ এই সময়ে ঢাকিদের চাহিদা থাকে বেশি। উপার্জনও হয় ভালোই। বিভিন্ন জায়গার পুজো কমিটি থেকে ডাক আসে। কিন্তু এই বছর অনেক শিল্পী ই এখনো পর্যন্ত ডাক পায়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূর্গা পুজোর অনুষ্ঠান হলে এবছর ডাক পাওয়ার আশাও কম বলে জানান তিনি। তবে শেষ মুহূর্তে হলেও মা দুর্গার কৃপাদৃষ্টি তাদের উপর পড়বে বলে আশা শিল্পীদের।
এ প্রসঙ্গে এলাকার তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মধ্যক্ষ সুজিত মুখোপাধ্যায় জানান গৌড়বাজার গ্রামের দুশোটি শিল্পী পরিবারের মধ্যে ৬০টি পরিবার রাজ্য সরকারের তরফ থেকে শিল্পী ভাতা পান প্রতিমাসে। অন্য পরিবারগুলিও যাতে এই সুবিধা পায় সেই বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। যদি কোন শিল্পী দুর্গাপূজার সময় ডাক না পান তাহলে সেই সব শিল্পীদের দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।